আনন্দের ঈদযাত্রা শুরু


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মার্চ ২৮, ২০২৫, ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ /
আনন্দের ঈদযাত্রা শুরু
  • সড়ক-রেল-বিমান-নৌপথে গ্রামে ফিরছে মানুষ, ঢাকা থেকে সড়কপথে প্রতিটি রুটেই বাস-মালিকদের বিরুদ্ধে টিকিটের দাম বেশি নেয়ার অভিযোগ যাত্রীদের

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। আর কয়েক দিন পরই ঈদুল ফিতর। ৯২ শতাংশ মুসলমানের দেশে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। আজ শুক্রবার থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি কাটাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। এতে প্রিয়জনের কাছে যেতে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরছেন নগরবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসে বিকেলের পর থেকে রাজধানী ছাড়তে বাস ও ট্রেন স্টেশনে ঘরমুখী মানুষের ঢল নামে। লঞ্চে যাত্রীদের চাপ।

মহাসড়কে বড় যানজট না হলেও রাজধানী থেকে বের হতে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। বাস-টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। কাউন্টারের সামনে এবং ট্রেন স্টেশনগুলোতে অপেক্ষমাণ মানুষদের ভিড় ছিল। লঞ্চ-টার্মিনালে ভিড় থাকলেও স্বাভাবিকভাবে ছেড়ে গেছে বেশির ভাগ লঞ্চ। রাজধানী ছাড়তে ঝক্কি-ঝামেলা থাকলেও ঈদের আনন্দে বাড়ি ফেরা মানুষদের মুখে ছিল আনন্দের ছাপ।

টানা ৯ দিন ঈদের ছুটি পেয়ে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা থেকে নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। প্রতি বছর ঈদযাত্রা ভোগান্তি আর যানজটের হলেও এবার নির্র্বিঘেœ ঘরে ফিরছে মানুষ। সড়ক-মহাসড়ক, রেল, বিমান, নৌপথে একই চিত্র। তবে যাত্রীদের অভিযোগ এবারো প্রতিবারের মতো বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

গতকাল গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ, কল্যাণপুর বাস-টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষ ঈদ করতে গ্রামে ছুটছেন। কমলাপুর স্টেশনে দেখা গেল যাত্রীর চাপ প্রচুর; তবে টিকিট ছাড়া কাউকে স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। সদরঘাটে দেখা গেল, ঈদ উপলক্ষে উপচেপড়া ভিড়। অভ্যন্তরীণ বিমান রুটে যাত্রীরা গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন। রাজধানী ঢাকার থেকে বের হতে এবং প্রবেশমুখে কিছুটা যানজট থাকলেও আগের বছরের মতো ‘চরম ভোগান্তি’ পরিস্থিতি নেই।

উত্তরবঙ্গের সড়কের চিত্র : ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে প্রবেশ করছে ঘরমুখো লাখো মানুষ। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যানবাহনের চাপ বাড়লেও এই মহাসড়কে কোথাও কোনো ধীরগতি বা যানজটের সৃষ্টি হয়নি। স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করছে সব ধরনের যানবাহন। এতে যাত্রীরা দারুণ খুশি। একাধিক বাসের যাত্রী জানান, বাস-মালিকরা বাড়তি ভাড়া নিলেও তারা আনন্দের সঙ্গে ঘরে ফিরছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাবতলী সাভার, আবদুল্লাহপুর, চন্দ্রা, গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে সিরাজগঞ্জের ঢাকা-বগুড়া, ঢাকা-পাবনা ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত এই মহাসড়কে যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি পোহাতে দেখা যায়নি। কর্মজীবী মানুষ সাধারণত বাস, ট্রাক, পিকআপ, মোটরসাইকেল ও ছোট ছোট যানবাহনসহ যে যেভাবে পারছে সেভাবেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছে। কোনোরকম যানজট বা ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরতে পেরে অনেক খুশি তারা।

ঢাকা থেকে রংপুরগামী এসআর পরিবহনের বাস-চালক হাসান আলী বলেন, কয়েক বছর আগেও ঈদের সময় সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে গাড়ির চালক ও যাত্রীদের। এ বছর মহাসড়কের চারলেন, ওভারপাস ও ফ্লাইওভারগুলো খুলে দেয়াতে তেমন কোনো ভোগান্তি নেই। স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চলাচল করছে। আরেক বাস-চালক মো. লিয়াকত হোসেন জানান, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক আগের চেয়ে অনেক উন্নত করা হয়েছে। তাই এ বছর যানজট হওয়ার শঙ্কা নেই। মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছে। যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় যানবাহন পারাপারে আড়াই কোটি থেকে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত আয় হচ্ছে।

ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিভিন্ন বাসের কয়েকজন যাত্রী জানান, যমুনা সেতু পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার মহাসড়কে কোনো যানজট বা গাড়ির ধীরগতি নেই। সাউথ এশিয়ান সাব রিজিওনাল কোঅপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে যমুনা সেতু পশ্চিমের ৩৭ কিলোমিটার মহাসড়কের ১৩টি আন্ডারপাসের ১১টি খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জের নিচের দুটি সার্ভিস সড়ক খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে এবার ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তির কোনো সম্ভাবনা নেই।

হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জের নির্মাণকাজ শেষ হলে আর কোনো ভোগান্তিই থাকবে না। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল রউফ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যানবাহনের চাপ কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু গত বছরের চেয়ে এ বছর উত্তরবঙ্গের মহাসড়কের অবস্থা অনেক ভালো। যার কারণে ভোগান্তি ছাড়াই উত্তরবঙ্গের মানুষ স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরতে পারছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে গাড়ির চাপ ততই বাড়ছে। তবে এখন পর্যন্ত মহাসড়কে কোনো যানজট নেই, এমনকি গাড়ির ধীরগতিও নেই। গার্মেন্টস কারখানা ছুটি হলে গাড়ির সংখ্যা আরো বাড়তে পারে, তবে যাত্রীদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

এদিকে ঢাকা টু ময়মনসিংহ সড়কেও যানবাহনের চাপ থাকলেও যানজট তেমন নেই।

ঢাকা টু চট্টগ্রাম : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যানবাহনের বাড়তি চাপ থাকলেও যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ফলে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে যাওয়া ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘেœ নিজ গন্তব্য পৌঁছাতে পারছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা টোলপ্লাজার ২১ কিলোমিটার সড়ক পর্যন্ত কোথাও কোনো যানজটের ভোগান্তি হয়নি বলে জানা গেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দূরপাল্লাসহ আঞ্চলিক বাসগুলো স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামার পর দ্রুত স্থান ত্যাগ করছে। এতে করে সড়কে যানবাহনগুলোর জটলা সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে যাত্রী এবং গাড়িচালকরাও স্বস্তিতে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটতে পারছেন।

এদিকে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে হাইওয়ে ও থানা পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এরিয়ার কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে পুলিশের সহযোগিতায় র‌্যাব সদস্যদের মহাসড়কে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ী মো. মন্টুর ধারণা, এবার যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হবে না ঘরমুখো মানুষকে। তবে মহাসড়কজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা না থাকলে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের শিকার হবেন অসংখ্য মানুষজন। নোয়াখালীর যাত্রী গার্মেন্টসকর্মী জাহিদুল ইসলাম বলেন, গাড়ির যথেষ্ট চাপ দেখতে পাচ্ছি। আমাদের অফিস গত পরশুদিন ছুটি ঘোষণা করেছে। অবশিষ্ট কাজকর্ম শেষে পরিবার নিয়ে ঈদ করতে গ্রামে যাচ্ছি। রাস্তায় যেহেতু যানজটের আশঙ্কা নেই, তাই মনে হচ্ছে দুই ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাতে পারব।

কয়েকজন দূরপাল্লার বাস-চালক জানান, বিগত বছরগুলোর মতো এবার মহাসড়কের কোথাও যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না তাদের। বর্তমান সময়ের মতো আগামী তিন-চার দিন থাকলে যাত্রীদের যাত্রা স্বস্তির হবে।

মহাসড়কের পরিস্থিতির বিষয়ে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আবু নাঈম বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় মানুষের ভোগান্তি এড়াতে আমাদের অতিরিক্ত ফোর্স কাজ করছে। ঈদ উপলক্ষে আমরা দিবারাত্রি ডিউটি করে যাচ্ছি। আশা করছি যানজটের ভোগান্তি থেকে ঘরমুখো মানুষকে মুক্ত করতে পারব।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াহিদ মোরশেদ বলেন, যানজট নিরসনে আমরা তৎপর রয়েছি। টহল টিমও বাড়ানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ অংশে মানুষকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না বলে আশাবাদী।

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মফিজুর রহমান জানান, ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা স্বস্তির করতে আমাদের থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মহাসড়কে কাজ করে যাচ্ছে। যাত্রীরা যাতে নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারে সে জন্য আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি।

ট্রেনের চালচিত্র : ঈদ উপলক্ষে শুরু হয়েছে ঘরমুখো মানুষের স্রোত। আগাম টিকিটধারীদের যাত্রার মধ্য দিয়ে ২৪ মার্চ সোমবার শুরু হওয়া ঈদযাত্রার গতকাল ছিল চতুর্থ দিন। এদিক কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রায় ৬৭টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৪৩টি আন্তঃনগর, ২৪টি মেইল কমিউটার। এসব ট্রেনের সঙ্গে দুটি বিশেষ ট্রেনও যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ট্রেনে প্রতিদিন ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহন করছে রেল। ট্রেনযোগে নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরছে মানুষ। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে সচেষ্ট আছে বলে জানিয়েছে। ট্রেনের সময় রক্ষা, অতিরিক্ত ট্রেন পরিচালনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদাররের মতো বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই বেশির ভাগ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। যদিও চিলাহাটি অভিমুখী নীলসাগর এক্সপ্রেস কিছুটা দেরি করেছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে যাত্রীদের দ্রুত ট্রেনে উঠতে ও নামতে সহায়তা করা হচ্ছে, যাতে প্ল্যাটফর্মে কোনো জটলা তৈরি না হয়। যাত্রীরা জানান, অনলাইনে টিকিট পাওয়া কষ্টকর। তবে টিকিট পেলে আর চিন্তা নেই। ট্রেনের সিডিউল স্বাভাবিক থাকায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করতে আনন্দেই ঘরে ফেরা যাচ্ছে।

কমলাপুর স্টেশনে দেখা গেল, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য স্টেশনজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি রয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ, আনসার এবং রেলওয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা টিকিট কাউন্টার, প্ল্যাটফর্ম ও প্রবেশপথে দায়িত্ব পালন করছেন। যাত্রীদের সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করাতে স্টেশনের বাইরে বাঁশের বেড়া দিয়ে চারটি পৃথক লাইন তৈরি করা হয়েছে, যেখানে টিকিট চেক করে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, এবারের ঈদযাত্রায় ১২০টি আন্তঃনগর ট্রেন ছাড়াও পাঁচজোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। অন্যান্য লোকাল, কমিউটার ও মেইল ট্রেনও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। তবে ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকাগামী ৯টি ট্রেনের বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি বাতিল করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীরা এবারের ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন। এখন পর্যন্ত ট্রেনের শিডিউল মেনে চলার বিষয়টি নিয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রেল কর্তৃপক্ষও আশা করছে, ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে তারা সফল হবে। একাধিক যাত্রী জানান, এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে কি-না, তা পুরো যাত্রার শেষে বোঝা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত রেলওয়ের পরিকল্পনা ও যাত্রীসেবার মান ঠিক আছে।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন জানান, ঈদে সবচেয়ে বেশি যাত্রী কমলাপুর থেকেই যাত্রা করেন। তাই স্টেশনে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ছাড়া ঈদ উপলক্ষে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর সাপ্তাহিক বন্ধ বাতিল করা হয়েছে।

সদরঘাটে ভিড় বাড়ছে : ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের পদচারণা বেড়েছে রাজধানীর সদরঘাটে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর নৌপথে যাত্রী কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। সারা বছর নৌপরিবহন শ্রমিকরা অলস সময় পার করেন। তবে এবার ঈদ উপলক্ষে লঞ্চকর্মীদের বেড়েছে ব্যস্ততা। হাঁকডাকে লঞ্চঘাটে ফিরেছে সদরঘাটে প্রাণচাঞ্চল্য। ঈদকে সামনে রেখে দক্ষিণের যাত্রীদের পদচারণায় জমে উঠেছে সদরঘাট। গত বুধবার থেকে যাত্রী নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঈদযাত্রা শুরু করেছে লঞ্চগুলো। অনেকটা স্বস্তিতে পরিবারকে সময় দিতে শেকড়ের টানে নদীপথে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, যাত্রীর সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বাসের বদলে লঞ্চে যাচ্ছি কেবিনে ঘুমিয়ে যাব।

সদরঘাট সরেজমিন ঘুরে নৌরুটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রী সমাগম বাড়লেও এখনো পুরো জমে উঠেনি সদরঘাট। এছাড়া টার্মিনালমুখী রাস্তায় তীব্র যানজটের কারণে কাক্সিক্ষত যাত্রী পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ লঞ্চ শ্রমিকদের। লঞ্চের স্টাফরা জানান, এখন অগ্রিম টিকিট তেমন বিক্রি হয় না। যাওয়ার উদ্দেশে এলেই সহজে টিকিট পাওয়া যায়। কেবিন, সোফা কিংবা লঞ্চের ডেকের ভাড়া আগের মতোই রয়েছে।

এদিকে বাড়ি ফেরা মানুষেরা জানান, ঈদ যত এগিয়ে আসবে, ভিড় আস্তে ধীরে বাড়বে। তখন ছেলেমেয়ে নিয়ে বাড়ি যাওয়া একটু বেশি কষ্ট হয়ে যায়। তাই আগেভাগেই অনেকে রাজধানী ছাড়ছেন।

এদিকে লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের প্রত্যাশা ২৭ রমজান থেকে লঞ্চের যাত্রী আরো বাড়বে। সদরঘাট থেকে এবার ৫০টি রুটে ১৭৫টি লঞ্চ যাত্রী পারাপার করবে। ভোগান্তিহীন ও নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিতের আশা বন্দর কর্তৃপক্ষের।

আকাশপথে ঈদ যাত্রা : দেশের আকাশপথে এবার বাড়ি ফেরা যাত্রীর চাপ তেমন একটা নেই। তাই বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো থেকে এখনো আসেনি অতিরিক্ত ফ্লাইটের ঘোষণা। তারা বলছে, সড়ক ও রেল যোগাযোগ সহজ হওয়ায় গত বছর থেকেই আকাশপথে বাড়ি ফেরা যাত্রীর চাপ কম। তবে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৩টি অতিরিক্ত ফ্লাইট চলবে তিনটি রুটে।

ঈদ এলে বাড়ি ফেরার চিত্র খুব সাধারণ। সড়ক, স্থল কিংবা জলপথ সবখানেই থাকে উপচেপড়া ভিড়। তবে গেল কয়েক বছর ধরে আকাশপথেও থাকে ঈদযাত্রার আমেজ। অল্পসময় আর ভোগান্তিহীন যাত্রায় অনেকেই হাওয়াই জাহাজে চেপে ফেরেন ঘরে। প্রতিবার ঈদ এলে তাই নাগালের বাইরে চলে যায় বিমানের টিকিটের দাম। যাত্রীচাপে অতিরিক্ত ফ্লাইটের ঘোষণা আসে এয়ারলাইন্সগুলো থেকে।

তবে এবারের চিত্র খানিকটা ভিন্ন। এ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে টিকিটের চাপ তেমন একটা নেই।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে বিগত বছরগুলোতে যেভাবে ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যেত, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুর যশোর বা বরিশাল সেগুলোতে। কিন্তু চলতি বছর সে চাপটা দেখছি না। সড়ক ও রেল যোগাযোগ সহজ হওয়ায় গত বছর থেকেই আকাশপথে বাড়ি ফেরা যাত্রীর চাপ কম।

তবে ব্যতিক্রম রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে তাদের অতিরিক্ত ১৩টি ফ্লাইট চলবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বুসরা ইসলাম বলেন, চাপ থাকে বলেই তো আমরা ফ্লাইট বাড়িয়েছি।