ইতিহাসের প্রথম অ্যান্ড্রোয়েড ফোনযুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আলতোয়, ২০০৩ সালের অক্টোবরে অ্যান্ড্রি রুবিন, রিচ মিনের, নিক সিয়ার্স এবং ক্রিস হোয়াইট এ চারজনের হাত ধরে অ্যান্ড্রোয়েড ইন কর্পোরেটেড অর্থাৎ অ্যান্ড্রোয়েড অপারেটিং সিস্টেমের জন্ম হয়। ১৯ বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে উন্মোচিত হওয়া এই অপারেটিং সিস্টেমটি আজ বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম।
অ্যান্ড্রোয়েড মূলত লিনাক্স কেরনাল অপারেটিং সিস্টেমকে নির্ভর করে বানানো একটি রূপান্তরিত অপারেটিং সিস্টেম যা প্রাথমিকভাবে উদ্ভাবন করা হয় স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা অন্যান্য হ্যান্ড হেল্ড ডিভাইস গুলোর জন্য। পরবর্তীতে গুগল এই অপারেটিং সিস্টেমের আরও উন্নতি সাধন করে।
বর্তমানে কেবল স্মার্টফোনই নয় টেলিভিশন, ল্যাপটপ, ক্যামেরা এমনকি ঘরের সিলিং ফ্যানসহ নিত্যদিনে ব্যবহৃত অনেক ডিভাইসই অ্যান্ড্রোয়েড অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
২০০৫ সালে স্যামসাং ও এইচটিসির সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা করে অ্যান্ড্রোয়েড। এরই মাঝে অ্যান্ড্রোয়েড কিনে নেয় গুগল। গুগলের ভাষ্যমতে এটা ছিল এখন পর্যন্ত গুগলের সেরা ডিল। সেই থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অ্যান্ড্রোয়েডকে।
অবশেষে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গুগলের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং তখনকার বিখ্যাত মোবাইল প্রযুক্তি নির্মাতা এইচটিসি’র সহায়তায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্মার্টফোন বাজারে নামে অ্যান্ড্রোয়েড।
ইতিহাসের প্রথম অ্যান্ড্রোয়েড স্মার্টফোনটি ছিল এইচটিসি ড্রিম। স্মার্টফোনটি টি-মোবাইল জি ওয়ান নামেও পরিচিত। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এবং ২০০৯ সালে বিশ্ববাজারে এই স্মার্টফোনটি প্রসার পায়। ২০১০ সালের জুলাই মাসে ফোনটির বাজারজাত বন্ধ করে দেয় টি-মোবাইল।
ততদিনে দ্বিতীয় অ্যান্ড্রোয়েড স্মার্টফোন এইচটিসি ম্যাজিক বাজারে জায়গা করে ফেলেছিলো এবং তা এইচটিসি ড্রিম থেকেও প্রচুর জনপ্রিয় হয়েছিল। এর মাধ্যমে প্রথম অ্যান্ড্রোয়েড ফোনের যুগের সমাপ্তি ঘটে।
স্মার্টফোনটিতে প্রসেসর হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল কোয়ালকমের ‘এমএসএম৭২০১এ’ চিপসেট। এই প্রসেসরটির কার্যক্ষমতা ছিল ৫২৮ মেগাহার্জ পর্যন্ত। গ্রাফিক্স কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল অ্যাড্রিনো ১৩০। স্টোরেজ সুবিধা ছিল ১৯২ মেগাবাইট ও ২৫৬ মেগাবাইট দুটি ভ্যারিয়েন্টে।
ফোনটি চলতো অ্যান্ড্রোয়েড ১.৬ ডোনাট অপারেটিং সিস্টেমে। ইউজার ইন্টারফেস ছিল গুগলের স্টক ইউজার ইন্টারফেস। ফোনটিতে ডিসপ্লে হিসাবে দেওয়া হয়েছিল ৩.২ ইঞ্চির টিএফটি মনিটর। ডিসপ্লের রেজুলেশন ৩২০বাই৪৮০ (থ্রিজিপি)।
ফোনটির পিছনের প্যানেলে ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ৩.১৫ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর। ছিল না কোনো সেলফি ক্যামেরা।
ফোনটি সচল রাখতে ব্যবহার করা হয়েছিল ১১৫০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের অপসারণযোগ্য লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। ক্যাবল-টাইপ মিনি ইউএসবি।
সাউন্ড সিস্টেম হিসাবে ছিল একটি লাউড স্পিকার এবং ছিলনা কোনো হেডফোন জ্যাক। আলাদা মেমোরি কার্ডের জন্য ছিল মাইক্রো এসডি কার্ডের ডেডিকেটেড স্লট। ফোনটি কালো ও সাদা দুটো রঙে পাওয়া যেতো।
তখনকার সব ফোনের মত এই ফোনটিও ছিল অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমের এবং ফোনটির ওজন ছিল ১৫৮ গ্রাম। টাচ প্যানেল থাকলেও ফোনটি ছিল স্লাইড এবং স্লাইড উঠালে একটি কোয়েরটি কি-বোর্ড ছিল যাতে টাইপ করা যেতো।
ফোনটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫০ ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় তৎকালীন সময় যার দাম ছিল প্রায় ১৩ হাজার টাকা। মূলত এটা ছিল একটি গবেষণা, একটি সাহসী পদক্ষেপ, একটি পরীক্ষামূলক উদ্ভাবন যার ফল আজ ভোগ করছেন প্রায় আড়াই বিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী।
যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করার পাশাপাশি, পুরো বিশ্বকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে অ্যান্ড্রোয়েড।
আপনার মতামত লিখুন :