ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে ইরানের এক সামরিক উপদেষ্টার বক্তব্যে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ইরান এমন সামরিক সক্ষমতা অর্জন করেছে যে তারা চাইলে টানা দুই বছর প্রতিদিন ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারবে, তাও আবার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে। ইরান এখন তাদের সামরিক শক্তির অনেক দিকই গোপন রেখেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এই বক্তব্য দিয়েছেন আইআরজিসির উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ইব্রাহিম জাব্বারি। সোমবার (৭ জুলাই) ইরানের আধা-সরকারি সংবাদমাধ্যম মেহর নিউজ–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমাদের ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, অস্ত্র মজুদ এবং সামরিক স্থাপনাগুলোর অধিকাংশই এখনও গোপন রয়েছে।” তিনি যোগ করেন, “যদি ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলেও প্রতিদিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে আমরা টানা দুই বছর যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারব।”
মেজর জেনারেল জাব্বারি আরও দাবি করেন, ইরানের অস্ত্রভাণ্ডারে এমন বিপুল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন রয়েছে যা এখনো প্রকাশ্যে আনা হয়নি। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “ইসরায়েল এবং তার মিত্রদের বুঝতে হবে—আমাদের প্রকৃত শক্তি এখনও পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়নি।”
জাব্বারির এই বক্তব্যের পরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির আরেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রাহিম সাফাভিও একই সুরে কথা বলেন। তিনি জানান, ইরানের নৌবাহিনী, কুদস ফোর্স এমনকি পুরো সেনাবাহিনী এখনো মাঠে নামেনি। তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে কয়েক হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তৈরি করেছি এবং সেগুলো নিরাপদ ঘাঁটিতে সংরক্ষিত রয়েছে।”
এই দুই সামরিক উপদেষ্টার মন্তব্য এমন সময় এল যখন গত মাসে (১৩ জুন) ইসরায়েল আচমকা হামলা চালায় ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায়। এই হামলায় ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী অন্তত ৯৩৫ জন নিহত হন এবং ৫,৩৩২ জন আহত হন। এর পাল্টা জবাবে ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের ভেতরে আঘাত হানে। জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, ইরানে পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে ২৯ জন নিহত এবং ৩,৪০০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে এই পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, একটিমাত্র উসকানিতেই পুরো অঞ্চল জুড়ে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
আপনার মতামত লিখুন :