ইসলাম ধর্ম পাঁচটি ভিত্তির ওপর স্থাপিত। তার মধ্যে নামাজ বা সালাত শীর্ষে। সালাত এমন এক ইবাদত যার মাধ্যমে বান্দা ও তার প্রভুর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। যে বান্দা অত্যন্ত বিনয়, নম্রতা, ভক্তি ও আন্তরিকতার সঙ্গে পবিত্র অবস্থায় সালাত আদায় করে সেই তার মহান প্রভুর সান্নিধ্যে উপনীত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে।
একজন বান্দার জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন’ (সুরা বাকারা-১৫৩)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘আমার স্মরণের জন্য সালাত আদায় করো’ (সুরা ত্বাহা-১৪)।
রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কারও ঘরের দরজার সামনে যদি কোনো নদী থাকে আর তাতে তোমরা যদি প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করো, এরপর তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকতে পারে? সাহাবিগণ উত্তরে বললেন, না তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে না। নবী করিম (সা.) বললেন, ঠিক তেমনি যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পবিত্রতার সঙ্গে আদায় করল, আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার সমস্ত পাপ ঠিক তেমনি করে মোচন করে দেন’ (সহিহ মুসলিম) সুবহানাল্লাহ।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে পারলে এর চেয়ে বড় সৌভাগ্যের আর কী হতে পারে? সালাত একজন মুসলমানের জীবনের সবচেয়ে বড় নেয়ামত। হাদিসে এসেছে, ‘পরকালের হিসাব নিকাশ গ্রহণের সময় সর্বপ্রথম আল্লাহতায়ালা সালাতের হিসাব-নিকাশ গ্রহণ করবেন।’ (তাজিমু কাদরিস সালাত)। ‘বেহেশতের চাবিকাঠি হলো সালাত’ (তিরমিজি শরিফ)। তাই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভ করতে হলে সালাতকে মনেপ্রাণে হৃদয়ে আঁকড়ে ধরতে হবে এবং বিনয় ও ভক্তি সহকারে আল্লাহর প্রতি সালাতের মাধ্যমে আনুগত্য প্রদর্শন করতে হবে।
নামাজ আদায়ের শর্তসমূহ : পবিত্রতা অর্জন করা. নামাজ আদায়ের প্রথম শর্ত শরীর ও পরিধেয় কাপড় পবিত্র হওয়া। পাশাপাশি প্রয়োজন অন্তরের পবিত্রতা। কারণ অন্তর পবিত্র না হলে মূল পবিত্রতার প্রাণশক্তি নষ্ট হয়। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো। যেগুলো তোমাদের আমি রিজিক হিসেবে দান করেছি এবং শুকরিয়া আদায় করো আল্লাহর যদি তোমরা তাঁর বান্দা হও’ (সুরা বাকারা-১৭২)। ছতর বা লজ্জা স্থান ঢেকে রাখা। সালাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিংবা সালাতের পরও লজ্জা স্থান ঢেকে রাখা ফরজ। একেই ইসলামী পরিভাষায় পর্দা বলা হয়। পর্দা নারী-পুরুষ সবার জন্য ফরজ।
অন্তরে বিনয়ী হওয়া : নামাজ আদায়ের আগে মনকে দুনিয়ার যাবতীয় বিষয় থেকে মুক্ত করে পুরোপুরি বিনয় ও ভক্তির সঙ্গে উত্তমভাবে শরীরের অঙ্গসমূহের পূর্ণাঙ্গ নিয়োজিতকরণের মাধ্যমে সালাত আদায় করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আল্লাহর আনুগত্য লাভের উদ্দেশ্যই সালাত আদায় করছি যা আমার জন্য পরকালের সম্বল হিসেবে গণ্য হবে। সালাতের উদ্দেশ্যে মনকে প্রফুল্ল রাখতে হবে : সালাত আদায় করতে হবে খুশি মনে। আল্লাহ আমাকে দেখছেন এ কথাটি মনে রাখতে হবে।
সুতরাং বিনম্রচিত্তে প্রফুল্ল মন নিয়ে সালাত আদায় করতে হবে অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমার পরিবার পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত রয়েছে কঠোর স্বভাব, পাষাণ হৃদয়ের ফেরেশতারা। তারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয় তারা তাই করে’ (সুরা তাহরিম-৬)।
সুতরাং দোজখের আগুনের ইন্ধন থেকে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে হলে বিনম্রচিত্তে সালাত আদায় করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
আপনার মতামত লিখুন :