ঈদের দ্বিতীয় দিনে কুমিল্লার শালবনে দর্শনার্থীদের ভিড়


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ৮, ২০২৫, ৯:৪৭ অপরাহ্ণ /
ঈদের দ্বিতীয় দিনে কুমিল্লার শালবনে দর্শনার্থীদের ভিড়

ঈদের দ্বিতীয় দিন জমে উঠেছে কুমিল্লার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। গরম উপেক্ষা করেও শালবন বিহারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো ঘুরে দেখছে মানুষজন। কুমিল্লার অধিবাসীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পুরানো বৌদ্ধ বিহার এবং শতবর্ষী শালবনের সবুজ অরণ্য ঘুরে দেখছেন তারা।

এ ছাড়া নব শালবন বিহারও দেখছেন অনেকে। পাশের প্রত্নক্ষেত্র ইটাখোলা মূড়া, রূপবান মূড়া, হাতিগাড়া মূড়াতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে প্রচন্ড গরমে শিশু ও নারীদের ভোগান্তিতে হচ্ছে বলে জানালেন দর্শনার্থীরা। অনেকেই বিহার ছেড়ে আশপাশের গাছের তলায় বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে।

ঢাকা থেকে আসা বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “দুই মেয়েকে নিয়ে এই প্রথম কোটবাড়ী শালবন বৌদ্ধ বিহার দেখতে আসলাম৷ এখানে ঘুরে যেমন ভালো লেগেছে, তেমনি আমার ছোট দুই মেয়ে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কেও জানতে পেরেছে।”

ইমতিয়াজের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে ইফতি আহমেদ বলে, “শালবনে ঘোড়ায় চড়ে ভালো লেগেছে। বনটা একদম ছোট। বিহারে গিয়ে দ্রুত ঘুরে বের হতে হয়েছে, অনেক গরম।”

ময়নামতিতে খনন করা সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম প্রধান। কোটবাড়ি বার্ডের কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল ‘শালবন বিহার’।

বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মত হলেও আকারে ছোট। ধারণা করা হয়, খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন। শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্র্নিমাণ পর্বের কথা জানা যায়।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মাধুরী দেবনাথ বলেন, “ঈদের ছুটিতে কুমিল্লায় এসেছি, দুইদিন ঘুরব। শালবন বিহার ভালো লেগেছে। ছেলে-মেয়েরা শুধু বইয়ের পড়েছে এই বিহার সম্পর্কে, এবার তারা সামনাসামনি প্রাগৈতিহাসিক বিশাল বৌদ্ধ মন্দিরটি দেখলো।”

তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “শালবন বিহারের আশপাশে আরো যেসব বৌদ্ধ মন্দির বা বিহার রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে একটি প্রকাশ্য সাইনবোর্ড বা রোডম্যাপ থাকলে খুব ভালো হত। আগে থেকে জানা না থাকলে অনেক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এসে শুধু শালবন বিহার ঘুরে চলে যায়; আশপাশে যে ইটাখোলা মূড়া, রূপবান মূড়া রয়েছে তা বুঝতে পারে না।”

মাধুরীর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নীলাঞ্জনা দেবনাথ বলেন, “শালবনে এসে দেখলাম বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কিভাবে পড়াশুনা করতেন, পূজাপাঠ করতেন। বইয়ে পড়া জিনিস বাস্তবে দেখে ভালো লাগছে।”

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা থেকে আসা ফরিদুজ্জামান বলেন, “বিহারের ভেতরে অনেক গরম। বাচ্চাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে সবাই তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছে। ভেতরে খাবার পানির ব্যবস্থা নেই। ছায়ায় বসতে হলেও দূরে যেতে হবে। তারপরও ঘুরতে আসা কারণ ঈদের পরে আর ছুটি পাওয়া যাবে না।”

রোববার বিকাল পর্যন্ত শালবন বিহারে ঘুরতে এসেছেন অন্তত হাজার দর্শনার্থী। শালবন বিহারের দায়িত্বে থাকা ময়নামতি যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম বলেন, “ঈদের পরদিন দর্শনার্থী কম থাকে। আর এবার অনেক গরম। তবে আশা করছি, আগামী যে কয়দিন ছুটি আছে, অনেকেই আসবেন।”

এদিকে পর্যটন মৌসুমকে কেন্দ্র করে প্রত্নক্ষেত্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুমিল্লার পরিদর্শক হারুনুর রশিদ বলেন, “শালবন বিহার এলাকায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও থানা পুলিশও কাজ করছে। আমরা চেষ্টা করছি, সরকারি বিনোদন কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রে পুলিশের হট লাইন নম্বর দেওয়া আছে, কারো কোনো অভিযোগ থাকলে তারা সেটিতে কল করে জানাতে পারেন।”