ওষুধ-রেস্তোরাঁ-পোশাকসহ ৭ পণ্য-সেবায় ভ্যাট কমিয়ে প্রজ্ঞাপন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ২৩, ২০২৫, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ / ০ Views
ওষুধ-রেস্তোরাঁ-পোশাকসহ ৭ পণ্য-সেবায় ভ্যাট কমিয়ে প্রজ্ঞাপন

অবশেষে ওষুধ, রেস্তোরাঁ, পোশাক ও মোবাইল সেবাসহ বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ওপর আরোপিত শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট কমালো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মোট ৭ রকম পণ্য ও সেবার ওপর ৯ ধরনের ছাড় দিয়ে বুধবার ৪টি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

করছাড় পাওয়া খাতের মধ্যে রয়েছে ওষুধ, মোবাইল সিম ও ইন্টারনেট সংস্থা (আইএসপি), নন-এসি হোটেল, রেস্তোরাঁ, মোটর গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও পোশাক। এর মধ্যে মোবাইল সিম কার্ড ও আইএসপি সেবার ওপর পৃথক এবং পোশাকের ক্ষেত্রে নিজস্ব ব্র্যান্ড ও নিজস্ব ব্র্যান্ডের বাইরের পোশাকের ক্ষেত্রে আলাদা ভ্যাটহার নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (মূসক নীতি) ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সী গণমাধ্যমে বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আজ (বুধবার) থেকেই তা কার্যকর হবে।’

বাংলাদেশের নিজস্ব আর্থিক ভিত মজবুত করার লক্ষ্যে গত ৯ জানুয়ারি সরকার ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এবং ‘দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট অ্যাক্ট (অ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’ অধ্যাদেশ জারি করে। সেখানে বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারি শুল্কের হার পুনঃনির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এতে ফুঁসে ওঠে নাগরিক সমাজ। এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল-আমিন শেখ জানান, ‘পেশাজীবী সংগঠন, সুশীল সমাজ ও অংশীজনদের অনুরোধ বিবেচনায় বৃহত্তর জনস্বার্থে কিছু পণ্য ও সেবায় বিদ্যমান ভ্যাটের হার, উৎসে ভ্যাট কর্তনের হার এবং সম্পূরক শুল্কের হার কমিয়ে এনে নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এনবিআর। ভবিষ্যতেও বৃহত্তর জনস্বার্থে করছাড় দেওয়া হবে।’

এনবিআর জানিয়েছে, সব জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসা সেবাকে আরও সহজতর করার লক্ষ্যে ওষুধ শিল্পের ওপর ব্যবসায়িক পর্যায়ে বাড়ানো ভ্যাটের হার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে আগের মতোই ২ দশমিক ৪ শতাংশ রাখা হয়েছে, যা এর আগের আদেশে ৩ শতাংশ করা হয়েছিল। এনবিআর আশা করছে, ওষুধের ওপর অতিরিক্ত আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার করায় ওষুধ শিল্পের ধারাবাহিক বিকাশ বজায় থাকবে এবং সাধারণ ভোক্তা পর্যায়ে ওষুধের দাম বাড়বে না। মোবাইল ফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার ওপর বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, ২৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতোই ২০ শতাংশ করা হয়েছে।

এছাড়া ইন্টারনেট সংস্থা (আইএসপি) সেবার ওপর নতুন আরোপিত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে আইএসপিতে কোনো সম্পূরক শুল্ক দিতে হবে না। দেশের চলমান ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও আধুনিক আইটি জ্ঞানসম্পন্ন তরুণ প্রজন্ম বির্নিমাণ এবং অনলাইনভিত্তিক কর্মকান্ড বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ ছাড় দিয়েছে এনবিআর। সংস্থার প্রত্যাশা, মোবাইল ফোন এবং আইএসপি সেবার ওপর নতুন আরোপিত সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করায় এই দুই খাতে ভোক্তাদের খরচ বৃদ্ধি পাবে না।

এনবিআর আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য সুলভমূল্যে রেস্তোরাঁয় খাবার গ্রহণের সুবিধার্থে থ্রি-স্টার, ফোর-স্টার এবং ফাইভ স্টার হোটেল ছাড়া অন্য সকল রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত আরোপিত ভ্যাট সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, ১৫ শতাংশের পরিবর্তে আগের মতোই ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থাকবে। অতিরিক্ত আরোপিত ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ফলে সাধারণ জনগণ আগের দামেই এসব রেস্তোরাঁর খাবার গ্রহণ করতে পারবেন।

এ ছাড়াও নন এসি হোটেল এবং মিষ্টান্ন ভান্ডারে আরোপ করা ১৫ শতাংশ থাকছে না। আগের মতোই তা ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। জনস্বার্থে মোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ সেবায় বাড়ানো ভ্যাটের হার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১৫ শতাংশের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আগের মতো ১০ শতাংশ ভ্যাট রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত আরোপিত ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ফলে এ সংশ্লিষ্ট সেবামূল্য বৃদ্ধি পাবে না বলে মনে করে এনবিআর।

একই বিবেচনায় তৈরি পোশাক বিক্রির ওপর অতিরিক্ত আরোপিত ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে নিজস্ব ব্র্যান্ডের পোশাকের ক্ষেত্রে ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল। আর নিজস্ব ব্র্যান্ডের বাইরের পোশাকের ক্ষেত্রে সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল।

ফলে এসব খাতের ভ্যাটও আগের মতো অপরিবর্তিত থাকছে। এতে খরচও বাড়বে না। এর আগে যেসব খাতে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন খাতে শুল্ক ও করছাড়ের বিষয়ে তুলে ধরে এনবিআর জানিয়েছে, দেশের আপামর জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে গত কয়েক মাসে এনবিআর ভোজ্য তেল, চিনি, আলু, ডিম, পেয়াজ, চাল, খেজুর এবং কীটনাশকের ওপর আমদানি শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি, ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর এবং আগাম করের ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে করছাড় প্রদান করেছে।

বাংলাদেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পুস্তকের সহজলভ্যতা, আধুনিক ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ই-বুক সেবায় স্থানীয় সরবরাহ ও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। আর যানজট নিরসনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় দ্রুতগামী, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব মেট্রোরেল সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও হজ যাত্রীদের খরচ কমানোর লক্ষ্যে এনবিআর হজ টিকিটের ওপর আরোপযোগ্য আবগারি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।