রাজধানীর ভাসানটেকের পুরাতন কচুক্ষেত বাজারে হাসান পীরের আস্তানায় এক নারী মুরিদের সাবেক স্বামী খুনের ঘটনায় পীর হাসান উদ্দিন সরদার ও আঁখি নামে এক নারী মুরিদকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুরাতন কচুক্ষেত বাজারের একটি বাড়ির চার তলায় পীরের আস্তানা থেকে পুলিশ আমিনুল ইসলাম (৪৫) নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে নিহতের চাচা হাশেম মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ভাসানটেক থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত শাবল উদ্ধার করেছে।
পুলিশ ধারণা করছে, পীর হাসানের মুরিদ সুরমা বেগম তার সাবেক স্বামী আমিনুল ইসলামকে আস্তানায় ডেকে নিয়ে শাবল দিয়ে আঘাত করে হত্যার পর পালিয়ে যায়।
পুরাতন কচুক্ষেত বাজারের চারতলা বাড়িটি হাসান পীরের আস্তানা হিসেবে খ্যাত। ওই বাড়ির মালিক হাসানের বাবা পাগলা পীর নামে পরিচিত। এক সময় হাসান একটি বাহিনীতে চাকরি করতেন।
২০ বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর হাসান ওই বাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে পীরত্ব গ্রহণ করেন। দয়াল বাবা পীর নামে ওই বাড়ির চার তলায় আস্তানা গড়ে তোলেন। বাড়ির দোতালায় হাসান পীরের স্ত্রী ও দুই ছেলে বসবাস করেন। হাসান পীরের এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী।
ভাসানটেক থানার ওসি আবুল বাশার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সাত মাস আগে আমিনুল ইসলামের (৪৫) সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় সুরমা বেগমের (২৫)। এর পর পাঁচ সন্তানের জননী সুরমা বেগম নেত্রকোনার বারহাট্টা থেকে ঢাকা আসেন।
পুরাতন কচুক্ষেত বাজার এলাকায় ‘দয়াল বাবা’নামে পরিচিত হাসান উদ্দিন সরদার ওরফে হাসান পীরের কাছে মুরিদ হয়ে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে তার বাসাতেই থাকতে শুরু করেন।
এক পর্যায়ে সাবেক স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সংসারে ফিরতে চাইলে গত বুধবার নিতে আসেন আমিনুল। রাতে আমিনুল ও সুরমাকে নিয়ে বৈঠক করেন হাসান।
সুরমা এক পর্যায়ে আমিনুলকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। আমিনুল ঘুমিয়ে পড়লে শাবল দিয়ে হত্যা করে রাতেই পালিয়ে যায় সুরমা। বৃহস্পতিবার সকালে হাসান নিজেই ৯৯৯-এ ফোন করে খুনের বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই লোকমান হোসেন বলেন, শুক্রবার বিকেলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পীর হাসান ও আঁখিকে আটক করা হয়েছে।
আমিনুল ইসলামের চাচাতো ভাই আনোয়ার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গ থেকে লাশ গ্রহণ করেন। লাশ নেত্রকোনার বারহাট্টা থানার সাহতা গ্রামে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমিনুলের প্রথম স্ত্রীর ঘরে ১০-১১ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
আমিনুল সাহতা গ্রামে মাছের ব্যবসা করেন। সাত-আট মাস আগে পাশের গ্রামের সুরমাকে বিয়ে করেন। পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর ঢাকায় ডেকে নিয়ে আমিনুলকে খুন করে পালিয়ে যায় সুরমা।
আপনার মতামত লিখুন :