কয়েক শ বছরের পুরনো জিপিও ভেঙে ফেলা হচ্ছে , ৪০ হাজার ডাককর্মী দারুণ উৎকন্ঠায়!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মে ১৩, ২০২৫, ১০:২৯ অপরাহ্ণ /
কয়েক শ বছরের পুরনো জিপিও ভেঙে ফেলা হচ্ছে , ৪০ হাজার ডাককর্মী দারুণ উৎকন্ঠায়!

রাজধানীর ‘জিরোপয়েন্ট’ সংলগ্ন জিপিও (জেনারেল পোস্ট অফিস) ভবনের সম্পত্তির ওপর আবারও পড়েছে শকুনের দৃষ্টি। মানুষের নাম-পরিচয়, আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এই ডাক বিভাগের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটির দিকে এবার লোভাতুর চোখ পড়েছে আমলাদের। নতুন এক ছুতোয় তারা চাইছে কয়েক শ বছরের পুরনো ডাক বিভাগের সম্পত্তি দখল করতে। এরই অংশ হিসেবে ভবনটির স্থানে সচিবালয়ের এক্সটেনশন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ফলে জিপিও ভবন ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা-প্রস্তাবে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। হতাশা নেমে এসেছে প্রতিষ্ঠানটির ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে। ভবনটিকে ‘পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত’ দাবি করে সম্প্রতি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে ভেঙে ফেলার প্রস্তাব। এতে ডাক বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছেন।

ডাক বিভাগের ইতিহাস বর্ণাঢ্য ও সমৃদ্ধ। ভারতীয় উপমহাদেশে ডাক কার্যক্রম শুরু হয় ১৮৫৪ সালে। ১৮৭৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ইস্ট বেঙ্গল পোস্টাল সার্কেল। ১৯৪২ সালে অবিভক্ত ভারতে গঠিত হয় আসাম-বেঙ্গল পোস্টাল সার্কেল। ১৯৫৪ সালে ঢাকার সদরঘাটে স্থাপিত হয় প্রথম জেনারেল পোস্ট অফিস (জিপিও)। পরে ১৯৫০ সালে সদরঘাট থেকে গুলিস্তানে জিপিও স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬২ সালে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বর্তমান তিনতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়।

অবস্থানগত দিক থেকে ভবনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে এবং সারাদেশের ডাক সেবার সংযোগস্থল হিসেবে জিপিও নগরজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ভবনের সুপ্রশস্ত প্রাঙ্গণ এবং আকর্ষণীয় অবস্থান কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুবিধাভোগী মহল এটি আত্মসাতের চেষ্টা করেছে।

এ ধারাবাহিকতায় একবার শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ভবনটির জমি দখলের একটি অপচেষ্টা হয়। সে সময় দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কিত মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র শেখ হাসিনার কৃপা পাওয়ার আশায় জিপিও ভবনের জমিতে কয়েক শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প উপস্থাপন করেন। তিনি শেখ মুজিব ও শেখ রাসেলের নামে দৃষ্টিনন্দন উদ্যান তৈরির প্রস্তাব দেন। কিন্তু ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে এসএস ভদ্রকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

তবুও থেমে নেই স্বার্থান্বেষী আমলারা। যেখানে গোটা সচিবালয়কেই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা, সেখানে বর্তমান স্থানে সচিবালয় রেখে বরং সেটিকে সম্প্রসারণের পাঁয়তারা চলছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সম্প্রতি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে জিপিও ভবনকে ‘পরিত্যক্ত’ ও ‘অব্যবহৃত’ দাবি করে ভবনটি সচিবালয়ের এক্সটেনশন হিসেবে ব্যবহার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’ দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জিপিও ভবন মোটেও পরিত্যক্ত বা ব্যবহার অনুপযোগী নয়। বরং এটি ‘কেপিআই’ (Key Point Installation) তালিকাভুক্ত একটি স্থাপনা। এই ভবনে ডাক বিভাগের ২৪টি অপারেশনাল অফিস নিরবচ্ছিন্নভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখান থেকে ডাকসেবা গ্রহণ করছেন।

তারা বলেন, ডাক ভবন মহাপরিচালকের দপ্তর শেরে বাংলা নগরে স্থানান্তর করা হলেও ডাক সেবার অন্যান্য অপারেশনাল ইউনিট এখনো জিপিও কম্পাউন্ডেই অবস্থান করছে। তাই ডাক বিভাগের মতামত ছাড়া এমন প্রস্তাব পেশ এবং সেটিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে উপস্থাপন গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দার বিষয়।

তাদের বক্তব্য, জিপিও ভবন নিছক একটি ভবন নয়, এটি ডাক বিভাগের অন্তত ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রাণের জায়গা, তাদের গর্ব এবং ডাক সেবার ঐতিহ্যের প্রতীক। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ডাক বিভাগের এ ভূ-সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার যে কোনো উদ্যোগকে দেশের ডাক সেবার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

তারা আরও বলেন, অবিলম্বে এ প্রস্তাব বাতিল করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে ডাক বিভাগের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা এবং সম্মতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।