

অফিসিয়াল সব কাজ বাদ দিয়ে টাঙ্গাইলের একটি রিসোর্টে প্রমোদ বিলাসে আনন্দ উপভোগ করছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবির) ১৬ কর্মকর্তা। বেসরকারি একটি সংস্থার (এনজিও) অর্থায়নে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে গতকাল রোববার এবং আজ সোমবার টানা দুই দিনের অফিসের সব কাজ বাদ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তারা সবাই এখন মজেছেন আনন্দ বিনোদনে।
পাঠ্যবই ছাপার ভরা এই মৌসুমে টানা দুই কর্মদিবসের সরকারি অফিসিয়াল সব কাজ বাদ দিয়ে টাঙ্গাইলের একটি রিসোর্টে প্রমোদ বিলাসে আনন্দ উপভোগ করছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবির) ১৬ কর্মকর্তা। বেসরকারি একটি সংস্থার (এনজিও) অর্থায়নে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করে গতকাল রোববার এবং আজ সোমবার টানা দুই দিনের অফিসের সব কাজ বাদ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তারা সবাই এখন মজেছেন আনন্দ বিনোদনে। টাঙ্গাইলের সিগাল হোটেল নামের এই রিসোর্টে ১৬ কর্মকর্তার থাকা খাওয়া ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিনোদনের সব ব্যয়ভার বহন করছে ‘রুম টু রিড’ নামের একটি এনজিও। যদিও আনন্দ বিনোদনের এই প্রমোদ বিলাসের নাম দেয়া হয়েছে বাংলা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিখনসামগ্রী প্রণয়নবিষয়ক কর্মশালা। তবে বাংলা বিষয়ের কর্মশালার আয়োজন করা হলেও এখানে এমন কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন যারা বাংলা বিষয়ে অভিজ্ঞও নন। বেশ কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন যারা বিজ্ঞানের অথবা ফিজিক্সের ওপর দক্ষ। বাংলা বিষয়ের কর্মকর্তা না হয়েও তারা শুধুমাত্র আনন্দ বিনোদনের জন্যই কথিত এই বাংলার কর্মশালায় অংশ নিয়ে এনসিটিবির কাজ ফাঁকি দিচ্ছেন। বই মুদ্রণের কাজের তদারকির কাজ বাদ রেখে রোববার ও সোমবার তারা টানা দুই দিনের জন্য ঢাকার বাইরে আনন্দ ভ্রমণে সময় ব্যয় করছেন। আজ সোমবারও আনন্দ বিনোদনে পুরো দিনটি কাটাবেন তারা এই রিসোর্টে।
এদিকে এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বাংলা পঠন দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিখনসামগ্রী প্রণয়নবিষয়ক কর্মশালায় এই কর্মকর্তারা অংশ নিতে টাঙ্গাইলে দুই দিনের জন্য গেছেন। কর্মশালায় অংশ নিতে যেসব কর্মকর্তাদের এনসিটিবি থেকে পাঠানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে সেই তালিকায় রয়েছেন এনসিটিবির সচিব প্রফেসর মো: সাহতাব উদ্দিন (অবশ্য তিনি পরবর্তীতে যাননি), এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ মাহরুহা নাজনীন, মো: আবদুল মুমিন মোছাব্বির, ড. সাফায়েত আলম, এনসিটিবির বিশেষজ্ঞ আফসানা আইয়ুব, আসাদুজ্জামান, মো: আহসানুল আরেফীন চৌধুরী, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান, এনসিটিবির গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মফিজুর রহমান, মনির হোসেন মজুমদার, রুমা বেগম, মো: সালাহ উদ্দিন, মো: হাসানুজ্জামান, মো: সোহানুর রহমান, মো: রাকিবুর রহমান এবং মোহাম্মদ মাহরুম হাসান পান্না।
গতকাল সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের সিগাল রিসোর্টের রায়হানুজ্জামান এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান ‘রুম টু রিড’ নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান আমাদের এখানে ২৩ এবং ২৪ নভেম্বর দুই দিনের জন্য ৫০টি রুম এবং নাশতাসহ তিনবেলা খাবারের বুকিং দিয়েছেন। শিক্ষা বিভাগের অনেক কর্মকর্তাই এখানে এসেছেন। তারা সোমবার বিকেল পর্যন্ত এখানে অবস্থান করবেন। খরচের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, রুম টু রিড কত টাকা খরচ করছে এটা আমরা জানাতে পারছি না। তবে এখানে প্রতিটি ডিলাক্স রুমের ভাড়া (নাশতাসহ) সাত হাজার পাঁচ শ’ টাকা। আর দুপুর এবং রাতের খাবারের জন্য প্রতিজনের তিন হাজার টাকার মতো খরচ পড়বে। অর্থাৎ শিক্ষা কর্মকর্তাদের এই কর্মশালায় আনুমানিক বিশ থেকে ২৫ লাখ লাখ টাকাও বেশি খরচ হচ্ছে।
অপর দিকে বই মুদ্রণের এই পিক আওয়ারে (ভরা মৌসুমে) এনসিটিবির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ১৬ কর্মকর্তার পর পর দুই কর্মদিবসে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি থাকা কোনো মতে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন অনেকে। এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় এনসিটিবির সচিব প্রফেসর মো: সাহতাব উদ্দিন মিডিয়াকে এই প্রতিবেদককে বলেন, এই কর্মশালা সময়টি আগেই নির্ধারিত ছিল। এনসিটিবির আগের চেয়ারম্যান (অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী) থাকাকালেই এটি চূড়ান্ত করা হয়েছিল বিধায় এখন এটিকে বাদ দেয়া যায়নি। তবে এই সময়ে বই মুদ্রণের ভরা মৌসুমে এত সংখ্যক কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে কর্মশালায় পাঠানো উচিত হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তবে ভবিষ্যতে এমনটি আর কখনো হবে না বা হওয়া ঠিক হবে না বলেও তিনি মনে করেন। আর অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণেই তিনিও ওই কর্মশালায় যেতে পারেনি বলে জানান সচিব।
পাঠ্যবই মুদ্রণ ও এর তদারকি সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, সামনে নতুন বছর আসছে। এই সময়ে বই নিয়ে সব মহলেই উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। কেননা মাধ্যমিকে পর্যায়ের পাঠ্যবই মুদ্রণের অগ্রগতি এখনো সন্তোষজনক নয়। এ ছাড়া বইয়ের মান ঠিক রাখতে বিভিন্ন প্রেসে নিয়মিতভাবেই এনসিটিবির কর্মকর্তাদের মনিটরিং করতে হচ্ছে। এরপরও কিছু প্রেস মালিক অব্যাহতভাবে কাজের মান খারাপ করছে। তাদেরকে প্রেসগুলোতে দিনে রাতে কয়েক দফায় পরিদর্শন করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা। এই সময়ের মধ্যে ১৬ কর্মকর্তা ঢাকার বাইরে দুই দিনের জন্য কর্মশালার নাম করে প্রমোদ বিনোদনে যাত্রার যুক্তিযুক্ত কতটুকু তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
‘রুম টি রিড’ নামের এই এনজিওর ওয়েবসাইটে থেকে জানা যায় এটি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা এশিয়া ও আফ্রিকার শিশুদের সাক্ষরতা এবং মেয়েদের শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করে। এর কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের পড়ার দক্ষতা বাড়ানো, বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরের শিশুদের জন্য, এবং শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। সারা দেশে এই সংস্থাটির বেশ কয়েকটি শাখাও রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :