সড়কের পাশে ছোট ঝুপড়ি দোকান। দোকানের সামনে রাখা আছে টিনের ড্রাম। তার ওপরে প্লাস্টিকের কাটা জেরিক্যান। ক্রেতারা দেখলেই বুঝে যান দোকানটিতে চোরাই তেল কেনাবেচা হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে এ রকম অনেক দোকান দেখা যায়। ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের ১২ কিলোমিটারেই রয়েছে চোরাই তেলের এ রকম ১৬টি দোকান। খোলাবাজারে এভাবে জ্বালানি তেল বিক্রি করা অবৈধ হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের কতটি অবৈধ দোকান রয়েছে, তার কোনো তথ্য নেই ফায়ার সার্ভিস, থানা ও হাইওয়ে পুলিশ, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কিংবা প্রশাসনের কাছে।
তদারকি না থাকায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে চোরাই তেলের এসব অবৈধ দোকান। তেল দাহ্য পদার্থ হওয়ায় এসব দোকানে যেকোনো মুহূর্তে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। সর্বশেষ গত রোববার দিবাগত রাত ১১টার দিকে উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় এ রকম একটি অবৈধ দোকানে তেলবাহী গাড়ি দাঁড় করিয়ে তেল চুরির সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
তেলের দোকানটির ওপরে আসবাবের দুটি দোকান, আসবাব তৈরির একটি কারখানা, ঝুটের দোকানসহ ১০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট প্রথম দফায় ৯ ঘণ্টা; দ্বিতীয় দফায় একটি ইউনিট তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের দুই পাশে চোরাই তেলের ১৬টি দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানের সামনে এক-দুজন করে লোক বসা থাকেন। এ দোকানগুলোর সামনেই তেলবাহী গাড়ি দাঁড়ানোর পর পাইপ দিয়ে জ্বালানি তেল ট্যাংক থেকে বের করে নেওয়া হয়।
বাংলাবাজারের যে দোকানে কিছুদিন আগে আগুন লেগেছে, তার ঠিক পূর্ব পাশে ক্যাডেট কলেজের মূল ফটক লাগোয়া স্থানে এ রকম তেলের দোকান রয়েছে। বাঁশবাড়িয়া, ছোট কুমিরা, কাশেম জুট মিল গেট এলাকায়ও এ ধরনের দোকান দেখা যায়।
মা ফাতেমা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. রুবেল বলেন, অনেক ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ ভাড়ায়চালিত তেলবাহী গাড়ি দিয়ে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানি থেকে তেল কিনে আনে। অনেক সময় সেসব তেলের গাড়ির চালক ও সহকারীরা এ ধরনের অবৈধ দোকানে তেল বিক্রি করেন।
ছোট কুমিরা এলাকায় কসাইখানার পাশের এ রকম চোরাই তেলের একটি দোকান রয়েছে। দোকানটির মালিক মো. রাসেল বলেন, সীতাকুণ্ডে কতটি তেলের দোকান আছে তাঁর জানা নেই। তিনি এখন টুকটাক তেল বিক্রি করেন। বাজারমূল্য থেকে কমদামে তেল কিনে খুচরায় বিক্রি করেন। এতে প্রতি লিটারে তাঁর ৫ থেকে ১০ টাকা লাভ থাকে।
কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ২০-২৫টি অবৈধ তেলের দোকান থাকতে পারে। তবে সঠিক তথ্য তাঁর কাছে নেই।
মহাসড়কের পাশে ঠিক কতটি চোরাই তেলের দোকান রয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই পুলিশের কাছেও। সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান বলেন, অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান উচ্ছেদে দু-এক দিনের মধ্যে অভিযান চালানো হবে।
সড়কের পাশের তেলের দোকানগুলো সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জায়গায় গড়ে উঠেছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক-মহাসড়কের পাশের জমি সওজের। তারাই কেবল জানে এ ধরনের কতটি অবৈধ তেলের দোকান রয়েছে। দোকানগুলো অবৈধ হলে সওজ উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারে। সে ক্ষেত্রে তারা সওজকে সহযোগিতা করবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাদের কাছে সড়কের পাশের যত অবৈধ স্থাপনা আছে, তার তালিকা রয়েছে; কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে চোরাই তেলের অবৈধ দোকান কটি আছে, তার কোনো হিসাব নেই। দু-এক দিনের মধ্যে তাঁরা এ ধরনের তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানাবেন।
সওজ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, তাঁদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নেই। অবৈধ এ ধরনের দোকানের বিরুদ্ধে অনেক সময় তাঁরা চিঠি দিলে প্রশাসন অভিযান চালায়। তা ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট নিজেরাও অভিযান চালাতে পারেন। এ অবৈধ দোকান উচ্ছেদে তাঁরা উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দেবেন বলে জানান।
আপনার মতামত লিখুন :