খুলনার কয়রায় ভাঙ্গা বাঁধে পানি আটকালো


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ /
খুলনার কয়রায় ভাঙ্গা বাঁধে পানি আটকালো

তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা একটি রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হয়। তবে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হবে কয়েকটি গ্রাম।

খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণের জনপদ মাটিয়াভাঙ্গা এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে। রাতে হঠাৎ বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিলে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে একটি রিং বাঁধ দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পানি আটকায়। ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা একটি রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হয়। তবে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হবে কয়েকটি গ্রাম।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো: দিদারুল আলম জানান, ‘সুন্দরবনের কাছের আড়পাঙ্গাসিয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের মোহনা সংলগ্ন বাঁধটিতে এক মাস আগেই ফাটল দেখা যায়। বিষয়টি পাউবোকে জানানো হলেও তারা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘পাউবো তখন অল্প কিছু বস্তা ডাম্পিং করে দায়সারাভাবে কাজ শেষ করে। এ কারণে আগের ফাটলটি বড় হয়ে গত রাতে বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনের খবর শুনে রাতেই ঘটনাস্থলে যান মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সোহেল গাজী, আক্তারুল মোল্যা ও নয়ন খাঁসহ আরো অনেকেই। তারা গিয়ে দেখেন, বাঁধের মাটি বড় বড় খণ্ড হয়ে নদীতে ভেঙে পড়ছে। তাৎক্ষণিক গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে রাতের মধ্যেই তারা রিং বাঁধ নির্মাণ করেন। ফলে লোকালয় পানিতে প্লাবিত হওয়া থেকে রক্ষা পায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘জোয়ারের পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে দ্রুত বাঁধ সংস্কার করা না হলে আবারো ভাঙনের ঝুঁকি আছে।’ মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের অজিয়ার শেখ বলেন, ‘দেখতে দেখতে নদীর বাঁধ কীভাবে ভেঙে গেলো তা বুঝতে পারলাম না। মনে হচ্ছিলো বাড়ি-ঘর সব তলিয়ে যাবে। তবে রিং বাঁধ দেয়ায় এ যাত্রায় রক্ষা পেলাম।’

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওসমান গনি খোকন বলেন, ‘খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে রাতেই রিং বাঁধ দেয়ায় পানি আটকানো সম্ভব হয়েছে।’

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় কয়রা উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের দুটি পোল্ডারে (১৩-১৪/১ ও ১৩-১৪/২) প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ৩২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে উচ্চতা-প্রশস্ততা বৃদ্ধি, ঢাল সংরক্ষণ, নদীশাসন ও চর বনায়নের কাজ করা হচ্ছে। মাটিয়াভাঙার ভাঙনকবলিত এলাকাটিও ওই প্রকল্পের অংশ।

পাউবোর সাতক্ষীরা-২ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: আলমগীর কবীর বলেন, ‘শুক্রবার সকাল থেকে বাঁধটি মেরামতের কাজ চলছে। কাজ চলমান অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে বাঁধটি ভেঙে গেছে। কংক্রিট ব্লক নির্মাণের সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতেই বিকল্প রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে পারায় এলাকা প্লাবিত হয়নি।’

এ বিষয়ে স্থানীয়দের দাবি আগামী বর্ষার আগে ঠিকমতো বাঁধের কাজ শেষ না হলে বড় বিপদের সম্মুখীন হবেন তারা।

পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। তবে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, বরাদ্দ বিলম্ব, বালু-মাটির সঙ্কট ও নদীর ভাটার সময়ের ওপর নির্ভর করতে হওয়ায় কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। মাটিয়াভাঙ্গা এলাকার বাঁধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’