‘গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করো না’


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ /
‘গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করো না’
  • জালেমের সহযোগী-সমর্থকও জালেম

কাউকে সাহায্য-সহযোগিতা করারও ইসলামী দৃষ্টিকোণ ও মানদ- রয়েছে। যে কেউ কোনো কাজের সমর্থন চাইলেই বা যে কারো কোনো কাজ নিজের মনমতো হলেই নির্দ্বিধায় তার সাথে সহমত পোষণ ও সহযোগিতা করা যায় না।

কারণ, কুরআন-সুন্নাহর ভাষ্য হলো, সমর্থনকারীর ওপরেও কাজের দায় বর্তাবে। সহযোগিতাকারীও সওয়াব ও গুনাহের ভাগিদার হবে। কাজেই প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য অন্যের কেবল কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কাজেই শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় সহযোগিতা করা। যেন অন্যকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে গিয়ে শরীয়ত লঙ্ঘন করা না হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পরে সহযোগিতা করো। গুনাহ ও জুলুমের কাজে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় করে চল। নিশ্চয়ই আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন। (সূরা মায়েদা : ০২)।

উক্ত আয়াতের শিক্ষা এই যে, কোনো বিষয়ে অন্যকে সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য শর্ত হলো, যে বিষয়ে আমি সহযোগিতা করছি, তা নেক কাজ ও তাকওয়ার বিষয় হতে হবে। এবং জালেমের পক্ষাবলম্বন করা ও সমর্থন করা বড় অন্যায় ও গুনাহের কাজ। শরীয়তের নির্দেশনা হলো, জালেমকে যথাসম্ভব জুলুম থেকে বাধা দেওয়া। কমপক্ষে অন্তর থেকে ঘৃণা করা। এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : তোমরা জালেমদের দিকে একটুও ঝুঁকবে না, অন্যথায় জাহান্নামের আগুন তোমাদেরও স্পর্শ করবে এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো রকমের বন্ধু লাভ হবে না। আর তখন কেউ তোমাদের সাহায্য করবে না। (সূরা হূদ : ১১৩)।

এ আয়াতের মধ্যে সেসব লোকের জন্য বড় শিক্ষার উপকরণ রয়েছে, যারা জালেমদের প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে অন্যায় সমর্থন দিয়েছেন। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদের জাহান্নামের শাস্তির ধমকি দিয়েছেন। ‘লা তারকানু’ শব্দটির ব্যাখ্যায় সালাফে সালেহীন জালেমের সমর্থনের বেশ কিছু দিক বলেছেন : ১. জালেমের সঙ্গে সখ্যতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা। এমনিতেই ইসলামের মুআলাত ও বন্ধুত্বের মানদ- হল, ঈমান ও তাওহীদ। ঈমান ও তাওহীদকে বিসর্জন দিয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কোনো দর্শন ও মতাবাদকেন্দ্রিক ঐক্য ও বন্ধুত্ব গড়ার কোনো সুযোগ নেই।

২. জালেমের জুলুম ও অন্যায়-অবিচারকে পছন্দ করা ও তার প্রতি অন্যায় পক্ষপাত লালন করা। ৩. প্রতিবাদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও জালেমের জুলুমের প্রতিবাদ না করা; বরং এর ওপর মৌনতা অবলম্বন করা। ৪. জালেমের সংশ্রব গ্রহণ করা ও তার ব্যাপারে নমনীয়তা অবলম্বন করা। ৫. বাহ্যিক বেশভূষায় ও জীবনাচারে জালেমের অনুসরণ করা। তাকে অনুকরণীয় হিসেবে গ্রহণ করা। এ আয়াতে জালেমের সঙ্গে শুধু সখ্যতা ও সম্পর্ককেই নিষেধ করা হয়নি; বরং জালেমের ব্যাপারে সামান্যতম শিথিলতাকেও নিষেধ করা হয়েছে। (দ্র. তাফসীরের তবারী ৭/১২৩-১২৪; তাফসীরে কুরতুবী ৯/৭২; তাফসীরে মাযহারী ৪/৪৩০; তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৪/৬৭২-৬৭৩)।

শেষ কথা হলো, যারা জালেমকে জুলুমের কাজে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও সমর্থন করেছে তাদের উচিত, নিজেদের কৃতকর্মের ওপর অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে আল্লাহ তাআলার দরবারে খাঁটি দিলে তওবা করা, মাজলুমের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং হক ফিরিয়ে দেওয়া। অন্যথায় তাদের জন্যও অপেক্ষা করছে দুনিয়া-আখেরাতের লাঞ্ছনাকর শাস্তি।