ছয় মাসেও অধরা মানুষ মারার গল্পে ভাইরাল এসপি ইকবাল, কিন্তু কেন? জিজ্ঞাসা জাতির


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ১০:০৭ অপরাহ্ণ /
ছয় মাসেও অধরা মানুষ মারার গল্পে ভাইরাল এসপি ইকবাল, কিন্তু কেন? জিজ্ঞাসা জাতির

‘গুলি করি, মরে একটা। একটাই যায় স্যার। বাকিডি যায় না।’ ফেসবুকও সয়লাব এমন বক্তব্য দেয়া ছাত্র-জনতাকে হত্যার সাথে জড়িত ডিএমপির সাবেক ডিসি (এসপি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন এখনও অধরা। আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তা ইকবার ছয় মাসেও গ্রেফতার না হওয়ায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

সাধারণ মানুষের দাবি কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলন ঘিরে মানুষ মেরে ফেলার মতো কঠিন কাজ করেও বাক্যগুলো যিনি অবলীলায় বলেছেন, সেই ডিএমপি ওয়ারী বিভাগের সাবেক ডিসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনকে গ্রেফতার করে দ্রত আইনের আওতায় এনে বিচার করা প্রয়োজন।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসপি মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের মতো ভয়ংকর খুনীরা সংখ্যা পুলিশ বাহিনীতে কম নয়। যারা এখন পলাতক। এসব পলাতক খুনীরা এখনও অধরা থাকায় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতার অভিযান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পুলিশ সদর দফতরের সঠিক মনিটরিং ও দিক নির্দেশনা না থাকায় রাজধানীসহ সারাদেশে অপরাধী এবং জুলাই-আগস্টআন্দোলনে ছাত্র-জনতার খুনের সাথে জড়িতরা গ্রেফতার হচ্ছে না।

ইকবালের ব্যাচমেট ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ইনকিলাবকে বলেন, আন্দোলন দমনে ডিএমপির যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ‘অতি বল প্রয়োগ’ করেছেন, তাদের অন্যতম ইকবাল। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন না হলে তিনি হয়ে উঠতেন আরও ক্ষমতাধর। ৫ আগস্টের ঘটনায় ইকবালকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্তকরা হয়। এর পর থেকে তার কোন হদিস নেই। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেফতারে কোন উদ্যোগ নেই বর্তমান পুলিশ প্রশাসনের।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলির ঘটনায় মামলা হলেও মামলার আসামিদের অধিকাংশ দেশে থাকলেও তারা ধরাছোয়ার বাইরে। সূত্র জানায়, ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোর একটি ভিডিও দেখিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ওপরের কথাগুলো বলেছিলেন কিলার ইকবাল। সে সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে আগ্রহ নিয়ে এটি দেখেন সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ইকবালকে বলতে শোনা যায়, ‘গুলি করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলি করলে মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।’ মোবাইল ফোনে থাকা ভিডিওতে লাশ দেখিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এই যে ডেডবডিটা নামাইছি স্যার। কোমরে বেল্ট আর নিচে প্যান্ট ছিল।’ মানুষ হত্যার ঘটনার বর্ণনার সময়ও ইকবালের চেহারায় বিন্দুমাত্র অস্বস্তি দেখা যায়নি। অঙ্গভঙ্গিও ছিল যেন জীবজন্তু শিকার করছেন!

একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২৭তম বিসিএসের পুলিশ কর্মকর্তা ইকবাল সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন।কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে ২০২০ সালের জুলাইয়ে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। সে সময় ইকবাল কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন।

এ ঘটনায় জেলার পুলিশ সুপারসহ অন্যদের সঙ্গে তাকে বদলি করা হয়। ইকবাল ১৯৮১ সালের ১ ফেব্রæয়ারি নরসিংদীর মনোহরদী থানার খিদিরপুর ইউনিয়নের পীরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষক বাবা মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। ইকবাল গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্যানতত্তে¡ স্নাতকোত্তর করেন।

মৌলভীবাজার জেলায় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি শুরু করেন ইকবাল। ২০০৮ সালে তিনি ২৭তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হন। শুরুতে ডিএমপির কন্ট্রোল রুমে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। পরে হাবিবুর রহমানের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।

সিলেট মহানগর পুলিশেও এসি ছিলেন ইকবাল। ২০১৬ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদোন্নতি পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বদলি হন। প্রায় দুই বছর পর কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি হন। পুলিশে দক্ষতা ও সাহসিকতার স্বীকৃতি বিপিএম (সেবা) পদক পেয়েছেন তিনি। ২০০১ সালে পুলিশ সুপার পদোন্নতি পান এবং ডিবির স্পেশাল অ্যান্ড সাইবার ক্রাইম ইউনিটের (দক্ষিণ) উপকমিশনার হিসেবে যোগদান করেন।

তবে হাবিবুর রহমান ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর গত বছরের ৯ নভেম্বর ইকবাল ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার যেসব স্থানে বড় জমায়েত হয়, তার মধ্যে অন্যতম ওয়ারী বিভাগের আওতাধীন যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া ও কদমতলী। আন্দোলন দমাতে প্রাণপণ চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে ডিসি ইকবালের বিরুদ্ধে।

এসব এলাকায় সহিংসতা ও পুলিশের গুলিতে বহু প্রাণহানি হয়। ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক ইনকিলাবকে বলেন, ডিসি ইকবাল হোসাইনের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে সব ধরনের চেষ্টা চলছে।