প্রতিবেদকঃ সকালে বাংলার পুব আকাশে যে লাল টুকটুকে সূর্যটার দেখা মিলেছে তা ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে থাকলো। আজ থেকে ঠিক ৯৯ দিন আগে যে সকালটা আমাদের মাঝে এসেছিল তা ছিল যুদ্ধংদেহী। সাহসী ছাত্র-জনতার ঢাকা ঘেরাও করার কমূর্সচিতে ইতিহাসের প্রসববেদনা নিয়ে ওঠা সূর্য। সেদিনের সকালটা আর ১০টা সুস্থ স্বাভাবিক দিনের মতো ছিল না। আকাশ-বাতাসজুড়ে বন্দুকের ঠুসঠাস শব্দ আর গোলা বারুদের গন্ধেমূখরতা নিয়ে উঁকি দিয়েছিল সেদিনের সূর্যটা। সেই সকালে লাশে লাশে উপচে পড়েছিল হাসপাতালের মর্গগুলো।
সরকারি-বেসরকারি মেডিকেলের ফ্লোরগুলোয় হাত,পা, চোখ হারানো মানুষের আর্তনাদ। ঘরে ঘরে হায়েনাদের হামলার ভয়ে আতংকভরা মুখ। পুলিশ কিংবা পৈশাচিক ছাত্রলীগের হামলা কিংবা গুলীর সামনে পড়া সন্তানের লাশ খোঁজে ফেরা স্বজনদের নিশ্চুপ চেহারা।
সবাই অকপটে স্বীকার করে যে, এটা কারো জানা ছিল না যে, দুপুরের পরেই বদলে যাবে সকাল বেলার দৃশ্যপট। থেমে যাবে পুলিশের ঠুসঠাস গুলীর শব্দ। বারুদের গন্ধ মুক্ত হতে থাকবে ঢাকার বাতাস। বইতে শুরু করবে শান্তির বার্তা। পালিয়ে যাবে স্বৈরাচার। সেনা সদস্যদের কারো কারো স্লোগানের সাথে সাথে হাজারো কণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ জয়ধ্বনি। এটাও জানা ছিল না সেদিনকার যুদ্ধংদেহী সূর্যটা অস্তমিত হবে একটা নতুন ইতিহাস আর শান্তির বার্তা নিয়ে। আমি ৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্ট ২০২৪ ইং সালের সকালবেলার কথা বলছি। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সেই ইতিহাস ১০০ দিনে পা রাখলো।
মোটা দাগে এই ১০০ দিনের রোজনামচা কিংবা অর্জন বললে স্বৈরাচারের বিদায়কেই ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অর্জন বলতে হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে চিরে চেপটা হয়ে শেখ হাসিনার বিদায়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা। দিনটি ছিল সোমবার। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লং মার্চ টু ঢাকা ছিল এদিন। এর আগে দুইদিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গড়ে ওঠা এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পুরো জুলাই মাসজুড়ে চলে এই আন্দোলন। একপর্যায়ে সরকার কোটা সংস্কার করে। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে অত্যাচার নির্যাতনের জেরে এক দফা দাবি উঠে শেখ হাসিনার পদত্যাগ।
৩৬ জুলাই বেলা ১১টার পর থেকে ঢাকার পথে ঢল নামে মানুষের। কারফিউ উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেন হাজার হাজার লাখো লাখো ছাত্র জনতা। এক পর্যায়ে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। দুপুর আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে শেখ হাসিনাকে নিয়ে উড্ডয়ন করেন। এ সময় তার ছোট বোন শেখ রেহানাও সঙ্গে ছিলেন। এরপরই সেনা প্রধান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। ভাষণ দেওয়ার আগে তিনি দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিকেল ৪টায় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করবো এবং এই সরকারের মাধ্যমে দেশের সব কার্যকলাপ চলবে। আমরা এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাবো। গিয়ে এই সরকার গঠনের ব্যাপারে আলোচনা করবো।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে সেনাপ্রধান বলেন, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি সব হত্যা, সব অন্যায়ের বিচার আমরা করবো। আপনারা সেনাবাহিনীর প্রতি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখুন। আমি সব দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের কথা দিচ্ছি, আপনারা আশাহত হবেন না। ইনশাআল্লাহ আপনাদের যত দাবি আছে সেগুলো আমরা পূরণ করবো এবং দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবো। দয়া করে ভাঙচুর, হত্যা, মারামারি, সংঘর্ষ থেকে বিরত হন।
ততক্ষণে শেখ হাসিনার গণভবন জনতা দখল করে নেয়। ছিন্নভিন্ন করে ফেলে স্বৈরাচারের বাসভবন মসনদ। যে যা পারেন নিয়ে যান নিজের সম্পদ মনে করে; যা লুটপাট করে জমিয়েছিল হাসিনা। কেউ কেউ মহান প্রভুর প্রতি কৃতজ্ঞতায় সেজদায় অবনত হন গণভবনের মাঠে; ফ্যাসিস্ট তাড়াতে পাড়ার আনন্দে। পুরোটা দিন কাটে টান টান উত্তেজনা আর ফ্যাসিস্ট মুক্ত দেশ পাওয়ার আনন্দে। শহরের সব মানুষ রাস্তায় নেমে আসে নতুন দেশ পাওয়ার আনন্দে। হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রকাশ হতে না হতেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল শুরু করে সাধারণ মানুষ।
এদিকে পরম বন্ধু হাসিনাকে রক্ষা করতে না পেরে ৫ তারিখের বিপ্লবের পর ৬ তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় ভারত-বাংলাদেশ ট্রেন চলাচল। যা আজো চালু হয়নি। যুক্তরাজ্য কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে না যেতে পেরে ভারতের আশ্রয়ে থেকে হাসিনা নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। নিজের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে বার বার। কিন্তু পতিত স্বৈরাচার আদৌ এই দেশে ফিরে আসবে সেই বিশ্বাস আওয়ামী লীগের লোকজনও করে না। নিজে পালিয়ে গিয়ে শেষ করে দিয়েছে নিজের দলকে।
৬ আগস্ট ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, হাসিনা যে পদ্ধতিতে যুক্তরাজ্যের কাছে আশ্রয় চেয়েছেন, ব্রিটিশ অভিবাসন আইন অনুযায়ী তা সম্ভব নয়। কারণ তাদের অভিবাসন আইন অনুযায়ী, ভ্রমণকারী কোনো ব্যক্তির যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক বা সাধারণ আশ্রয় নেওয়ার নিয়ম নেই। বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সীমান্তবর্তী মেঘালয় রাজ্যের আন্তর্জাতিক সীমান্তে রাত্রীকালীন কারফিউ জারি করে ভারত। এদিকে হাসিনার পলায়নের পর দিশেহারা হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা প্রাণ বাঁচানোর চিন্তায় আত্মগোপন করে।
এর মধ্যেই সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয় ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পেট্রাপোল বন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে সাধারণ মানুষ এবং বাংলাদেশি পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেন। এরপরও আওয়ামী লীগ নেতাদের অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর আসতে থাকে গণমাধ্যমগুলোতে। বিচারপতি মানিকের পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার খবর সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দেয়।
৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত মূলত বাংলাদেশে ফাংশনাল সরকার ছিল না। সব কিছু ছিল সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। ৮ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়। তিনি দেশে সুশাসন কায়েমের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর কেটে যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন মাস। এগিয়ে আসে বিপ্লবের ১০০ দিন। বিগত দিনে ইউনূস সরকার প্রশাসনের প্রতিটি সেক্টরে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মোটা দাগে বলতে গেলে গেল ৯৯ দিনে ফ্যাসিবাদ বিদায় করতে পারার সক্ষমতাকে এক নম্বর অর্জন ধরে বাকী হিসেব-নিকাশ করতে হবে। এরপর ফ্যাসিবাদের বিচারের উদ্যোগ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারে কমিশন গঠন, আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারকে সহায়তার নানা উদ্যোগ, দোসরমুক্ত প্রশাসন গড়ার প্রক্রিয়া, ছদ্মবেশে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জনই বা কম কিসে। পুলিশের বিদ্রোহ, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদ্রোহ, জুডিশিয়ারি ক্যু, আনসার বিদ্রোহ, হিন্দুদের উপর নির্যাতনের উসিলায় আন্দোলন, ১৫ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দশ লাখ লোক জড়ো করে অচল করে দেয়ার চক্রান্ত, গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মতো ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের মধ্যে সরকারকে পড়তে হয়েছে।
বিভিন্ন মামলায় সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের অনেককে গ্রেপ্তার এবং তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা। গুম-খুনের তদন্ত, একতরফা ও অনিয়মের ভোটে নির্বাচিতদের নিয়ে গঠিত সংসদ বিলুপ্ত করা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তথাকথিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ, পুলিশ, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে চিহ্নিতদের একাংশকে সরিয়ে দিয়ে বিচারের সম্মুখীন করাও এই সাফল্যের মধ্যে পড়ে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনাটাও সরকারের অন্যতম সাফল্য।
নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর সারাবিশ^ থেকে অভিনন্দন এবং সহযোগিতার আশ^াস আসতে থাকে একের পর এক। ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরায় চাঙ্গা হতে থাকে। বাড়তে থাকে রিজার্ভের পরিমাণ। এছাড়া দীর্ঘ ১৬ বছরে পাচার হওয়ার লাখ লাখ কোটি ডলার ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপগ্রহণ করা হয়। তাতে সায় দেয় অপরাধ দমনের দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিক মনিটরিং সংস্থাগুলো।
অন্যদিকে বলতে গেলে বিপ্লবের ১০০ দিনের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সময়সীমা বেঁধে দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের আলটিমেটাম শেষ হলেও এক ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো দাবিই পূরণ হয়নি। বিশেষ করে সংবিধান বাতিল এবং রাষ্ট্রপতির অপসারণ।
ফ্যাসিবাদের বিচারের কাঠগড়া তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই। গত ১৭ অক্টোবর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে চলা হত্যাকা-ের অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ঘোষণা দেয়। বিচারকাজ শুরুর দিনেই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গত দেড় মাসে এক হাজার ছয় শ’র বেশি অভিযোগ গুমসংক্রান্ত ঘটনা তদন্তে সরকার গঠিত কমিশনে জমা পড়েছে। ৩৮৩টি অভিযোগ যাচাই করে কমিশন জানিয়েছে, এর মধ্যে ১৭২টি অভিযোগই এসেছে র্যাবের বিরুদ্ধে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দেশের ৫৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন। ফলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাসে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েরই উপাচার্য পদ পূরণ করা হয়েছে।
তবে এখনো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত উপাচার্য নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি চার বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাত ছিল অন্যতম ভুক্তভোগী। সুশাসনের এতটাই অভাব ছিল যে স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে এ দেশের ব্যাংকিং খাত এত বেশি সমস্যার মুখোমুখি আর কখনো হয়নি। আর তাই দীর্ঘদিন থেকে ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের গভীর আস্থাহীনতা তৈরি হয়। অন্তর্বর্তী সরকার এসে শুরুতে অর্থ উপদেষ্টা, পরে গভর্নর নিয়োগে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেয়ায় ব্যাংক খাত সংস্কারে দ্রুত কিছু কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে। আর্থিক অনিয়মে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর বোর্ড পরিবর্তনসহ একগুচ্ছ সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অসহনীয় খেলাপি ঋণ কমানো, বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটানো, ডলার সংকট অনেকটা কাটিয়ে ডলার বাজার ও আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার আবার চাঙ্গা হতে শুরু করলেও তারল্য সংকট নিয়ে কিছু ব্যাংক বিপাকে ছিল। সর্বশেষ আর্থিক অনিয়মে দুর্বল হয়ে পড়া বা তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে ধার দিতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) টাস্কফোর্স গঠন করেছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১৪ বছর আগে করা ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বিধান বৃদ্ধি (বিশেষ আইন) আইন’ বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পাশাপাশি এই আইনের অধীনে করা সব চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে পর্যালোচনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ‘বিতর্কিত’ বিশেষ বিধান আইনের অধীনে অনুমোদিত ৪৩টি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা উদ্যোগে দেনার ভারে জর্জরিত জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ম করপোরেশন (বিপিসি) এখন দায়মুক্ত। ডলারসহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সংস্থাটি জ্বালানি তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিপুল অঙ্কের বকেয়া শোধ করেছে।
শেষ কথা হলো ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের ৯ দফা এক দফায় পরিণত হয় এবং তার ফলে এই দিন ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এ বিজয়ে অবশ্যই ছাত্ররা প্রকৃত বিজয়ীর দাবিদার। এই আন্দোলনে গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেওয়া কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারে রয়েছে একটি ডাইনামিক উপদেষ্টাম-লী, যারা নিজ নিজ কর্মে ও অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ।
তাদের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ও দক্ষতাও ঈর্ষণীয়। গণমানুষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাদের অনেকেরই আছে। তবু মাঠ পর্যায়ের রাজনীতি তাদের সবার জন্যই একটি নতুন অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জিং হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের আন্দোলন, সড়ক অবরোধ, সচিবালয় ঘেরাও এবং তার ফল কঠিন ভবিষ্যতের ঈঙ্গিত দেয়।
একটি কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, এই দেশ এখনো স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেনি। স্বৈরাচারসহ বৈশ্বিক শক্তি এখনো এই দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সক্রিয় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জনগণসহ ছাত্রদের সজাগ দৃষ্টি এবং সরকারের প্রতি প্রত্যক্ষ সমর্থন দরকার আছে। এ ক্ষেত্রে সরকার, প্রতিষ্ঠানগুলো, জনগণ এবং সর্বোপরি ছাত্র সম্প্রদায় সংযত, সহমর্মী, পরিশীলিত এবং পেশাদার আচরণে অপারগ হলে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন আরো একবার থমকে যাবে। এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
আপনার মতামত লিখুন :