সব ধরনের নাশকতার কথা বিবেচনা করেই পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের চারস্তর বিশিষ্ট্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন হয়েছে। পতিত আওয়ামী লীগের দুস্কৃতিকারীরা প্রতিবেশি একটি রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নাশকতা করতে পারে এমন তথ্য রয়েছে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের হাতে।
এরই মধ্যে শনিবার ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা মূল মোটিফ ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’তে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে মোটিফটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। পুলিশ, র্যাবের দৃশ্যমান নিরাপত্তার পাশাপাশি সাদা পোষাকে বিপুল সংখ্যক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন।
পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠারনর নিরাপত্তা অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন আইন-শৃংখলঅ বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা। ঢাকা শহরে যে সব স্থানে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে, সে সব স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশেই কড়া নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নজরদারি করা হবে। বর্ষবরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বিক সমন্বয়ের জন্য পুলিশ সদর দফতর, সব মেট্রোপলিটন, রেঞ্জ ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের মধ্যে সমন্বয় করা হয়েছে। রমনা পার্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও র্যাব কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ইনকিলাবকে বলেন, বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো পহেলা বৈশাখে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের অনুষ্ঠান হবে। পহেলা বৈশাখ আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে ও নিরাপদে উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার পরিকল্পনা নিয়েছে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সমগ্র ঢাকা মহানগরীকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রমনা বটমূল আয়োজিত অনুষ্ঠান ও আনন্দ শোভাযাত্রা ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছ। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ডিবি ও সিটিটিসির সদস্যরা মোতায়েন থাকবে।
সবগুলো অনুষ্ঠানস্থল ডগ স্কেয়াড দ্বারা সুইপিং করা হবে। সোয়াট ও বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট স্ট্যান্ডবাই থাকবে। কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। পৃথক ট্রাফিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যে কোন ধরনের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার সাথে সমন্বয় করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকান্ড মনিটরিং এর জন্য উর্ধতন কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশবিরোধী ও জনশৃঙ্খলা অবনতির জন্য পরিকল্পিত নাশকতা রোধে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এর মধ্যে রয়েছে সারা দেশে মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ ক্যাডারদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করা; নৌঘাট, লঞ্চ টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে নজরদারি বাড়ানো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন সাইট পর্যালোচনা করে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা এবং অর্থদাতাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার স্ট্যান্ডগুলোতে নজরদারি বাড়ানো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় শপিং সেন্টার, মার্কেট, বাজার, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে নববর্ষের হালখাতা অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রেল স্টেশন, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালসহ জনসাধারণের চলাচলের স্থানে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া, ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যাতে অপপ্রচার চালিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন এবং নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
র্যাব ডিজি একেএম শহিদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বাংলা নববর্ষকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি ও সার্বিক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। র্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিম যে কোন ধরনের নাশকতা রোধকল্পে প্রস্তুত থাকবে। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।
র্যাব সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখ-১৪৩২ কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব সারাদেশ ব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে সারা দেশে র্যাবের সকল ব্যাটালিয়নসমূহ নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ২২৪টি পিকআপ টহল, ১২২টি মোটর সাইকেল টহলসহ সর্বমোট ৩৪৬টি টহল ও সাদা পোশাকে ৪১৩ জন সহ সর্বমোট ২৪৪৯ জন র্যাব সদস্য মোতায়েন রাখবে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানসমূহে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোন উগ্রবাদী গোষ্ঠী, অন্যান্য নিষিদ্ধ সংগঠন এবং রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী কুচক্রী মহল যাতে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী জোরদার করা হয়েছে।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে টিএসসি, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাতিরঝিল, মানিক মিয়া এভিনিউ, শিশু একাডেমি এবং রমনা বটমূলসহ রাজধানীর যেসকল স্থানে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সে সকল স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব কর্তৃক পর্যাপ্ত পরিক্ষণ চেকপোস্ট, টহল ও অবজারভেশন পোস্ট স্থাপনসহ বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে র্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং সম্পন্ন করা হবে।
এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সুইপিং পরিচালনার পাশাপাশি র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড যে কোন উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। র্যাবের কন্ট্রোল রুম, পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোল, চেকপোস্ট ও সিসিটিভি মনিটরিংয়ের পাশাপাশি যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফোর্স রিজার্ভ থাকবে। সর্বোপরি র্যাব সদর দপ্তর সার্বিক কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে মনিটর করবে।
আপনার মতামত লিখুন :