পদ্মা সেতু প্রকল্প ক্রয়পদ্ধতিতে উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়া সম্পন্ন হয়েছে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ১৮, ২০২৫, ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ /
পদ্মা সেতু প্রকল্প ক্রয়পদ্ধতিতে উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়া সম্পন্ন হয়েছে

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পাদনের দায়িত্ব দেওয়া হয় একটি পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে। বিনা দরপত্রে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ পাইয়ে দিতে ভূমিকা রাখে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। একই পদ্ধতিতে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে দুটি ম্যুরাল ও কিছু স্থাপনা নির্মাণে ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় করে বিগত সরকার।

২০২২ সালের ২৫ জুন অনুষ্ঠিত হয় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এ আয়োজন সম্পন্নে বিনা দরপত্রে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেওয়া হয়। মূল অনুষ্ঠান হয় সেতু প্রকল্প এলাকার মাওয়া ও জাজিরায় এবং মাদারীপুরে হয় সুধী সমাবেশ। দেশের প্রতিটি জেলায় বড় পর্দায় অনুষ্ঠান দেখানো, আতশবাজিসহ নানা আয়োজনও ছিল। পুরো আয়োজনের খরচ ৮৯ কোটি টাকা বহন করে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। কেনাকাটা কিংবা অনুষ্ঠান আয়োজনে ঠিকাদার বা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি নিয়োগ দেওয়া হয় সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে, উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়া।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেশি। তবে সেতু কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজন ও জনস্বার্থে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি অনুসরণ করে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয় সেতু কর্তৃপক্ষ। এ জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮-এর ৭৬(২) ধারা উল্লেখ করে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হয়। তখন ‘ইভেন্ট টাচ ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়।

নথিতে আরও দেখা গেছে, সুধী সমাবেশসহ কিছু কাজের জন্য ইভেন্ট টাচ ইন্টারন্যাশনাল চেয়েছিল ২৬ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, আর লেজার শো ব্যবস্থাপনার জন্য চায় ১৪ কোটি ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা। দর-নেগোসিয়েশন পর এই দুই খাতের ব্যয় নির্ধারণ হয় যথাক্রমে ২৬ কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৯২১ টাকা এবং ১৩ কোটি ৯৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৫০ টাকা।

এ ছাড়া, পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল নির্মাণেও কোনো দরপত্র ডাকা হয়নি। এসব কাজের অন্যতম ঠিকাদার ছিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ‘বালিশ-কাণ্ডে’ বিতর্কিত মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।

চূড়ান্ত বিলের নথি অনুযায়ী, উদ্বোধনী কমপ্লেক্সের নকশা ও তদারকির জন্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ৯৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা। মাওয়া ও জাজিরায় ভূমি উন্নয়ন ও পাইলিং বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী কমপ্লেক্স নির্মাণ, বৈদ্যুতিক কাজ, ফোয়ারা নির্মাণ ও শিল্পকর্ম বাবদ ব্যয় হয়েছে ৬৬ কোটি টাকা। আর জাজিরা প্রান্তে একই কাজের জন্য খরচ হয়েছে ৪২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে দুই প্রান্তে উদ্বোধনী কমপ্লেক্স তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা, যা মূলত ম্যুরালকেন্দ্রিক।

প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। অথচ ২০০৭ সালে প্রকল্প গ্রহণের সময় অনুমান করা হয়েছিল, প্রায় ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় হবে।