বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য দেশে কখনো পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র চর্চা হয়নি মন্তব্য মির্জা ফখরুলের


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ৯, ২০২৫, ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ /
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য দেশে কখনো পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র চর্চা হয়নি মন্তব্য মির্জা ফখরুলের

বাংলাদেশে কখনো পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, দেশে কখনো পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্রচর্চা হয়নি। তিনি বলেন, সম্ভবত লিগ্যাসি অব পাকিস্তানি পলিটিকসের কারণে এটি হয়নি। খুব স্বল্প সময় ধরে কিছুটা চর্চা হয়েছিল, তারপর আবার সেই চর্চা থেকে আমরা দূরে সরে গিয়েছি। তবে বর্তমান তরুণসমাজ এখন আমাদের চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে যৌথভাবে দ্য বাংলাদেশ ডায়লগ এবং ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজিত ‘সিভিল ডিসকোর্স ন্যাশনাল ২০২৫’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

বর্তমান তরুণ সমাজের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, অনেকেই বলেন কিছু হবে না। ছেলেরা এখন আমাদের চেয়ে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। আমি অত্যন্ত আশাবাদী হয়ে উঠেছি, অবশ্যই অনেক কিছু হবে। বাংলাদেশে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াব। তর্কবিতর্ক থাকবে, মতের অমিল থাকবে। আমি একজনের সঙ্গে একমত হবো না, কিন্তু তার মতের জন্য আমার জীবন দিয়ে দেবো। আমরা এটাতেই বিশ্বাস করি। আমরা এ লিবারেল ডেমোক্রেসিতেই বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি, আমার কথা বলার স্বাধীনতা থাকতে হবে, তোমারও কথা বলার স্বাধীনতা থাকতে হবে। এটাই হচ্ছে উপযুক্ত গণতন্ত্র।

তিনি বলেন, সময় তো ভালো যাচ্ছে না এখন, অনেকেই অনেক কথা বলছেন। অনেকেই মন খারাপ করছেন। আমি সব সময় আশাবাদী মানুষ। বয়স আমার অনেক, তবে আমি সব সময় আশাবাদী মানুষ। আমি মনে করি, এরপর ভালো সময় আসবে। আরও ভালো সময় আসবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জেনারেশন গ্যাপ (প্রজন্মের দূরত্ব) অনেক বেশি। ওদের বুঝতে আমার সময় লাগে। আমার মনে হয়, আমাদের বুঝতেও হয়তো সময় লাগে। যে কারণে এখন অনেক রাজনৈতিক সমস্যাও কিছু কিছু দেখা দিচ্ছে। এটিকে অন্তত একখানে আনা যেত, তাহলে বোধ হয় অনেকগুলো সমস্যার সমাধান হতো।

তিনি বলেন, জেন-জিদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় খুব কম। পরিচয়টা বাড়ানো দরকার। আবার ঢাকার চিন্তাভাবনার সঙ্গে ঠাকুরগাঁওয়ের চিন্তাভাবনা এক নয়। এই দূরত্ব মেটাতে হবে। তা না হলে আমরা যে প্রজন্ম, যে শক্তি, যে আর্মি তৈরি করতে চাচ্ছি, যেই আর্মি আমার বাংলাদেশকে বদলে দেবে, সেই জায়গায় আমরা আসতে পারব না।

বিতর্ক করার সময় ‘মাননীয়’ শব্দ পরিহারের অনুরোধ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার একটা আপত্তি আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর মাননীয় স্পিকার কথাটা কি আমরা বাদ দিতে পারি না? আমার কেন জানি মনে হয়, এই মাননীয় কথাটা থেকেই কিন্তু সমস্ত অটোক্রেসির (স্বৈরাচার) জন্ম হয়।

বাংলাদেশে কেউ মন্ত্রী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মানসিকতা বদলে যায় উল্লেখ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে যে-ই মন্ত্রী হয়ে গেল, সে সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন জগতে চলে গেল। তার স্যালুট, তার বাঁশি, তার গাড়ির সামনে একটা গাড়ি, পেছনে আরেকটা গাড়ি- এই যে মানসিকতাটা তৈরি হয়, এই মানসিকতা আমাকে ধীরে ধীরে ওই ডিক্টেটরের (স্বৈরশাসক) দিকে নিয়ে যায়।

টিবিডির পরিচালক সাইফ রুবাবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর এ কে এম ইলিয়াস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মাদ নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া, আইনজীবী রাশনা ইমাম, অ্যাডকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম ফারহান চৌধুরী, বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু, ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটির (ডিসিডিএস) সভাপতি শাহাদাত হোসাইন, ডিসিডিএসের প্রধান মডারেটর অধ্যাপক আকতারুজ্জামান, টিবিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবায়েত মান্নান রাফি প্রমুখ।