আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। চুয়ান্ন বছর আগে আজকের দিনে পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আমরা লাভ করি বিজয়। শত্রুমুক্ত হই আমরা আমাদের দেশ ও জাতি।
এদিনটি শুধু বিজয় দিবসই নয় এটি আমাদের মহান সাধীনতা দিবসও বটে। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের সকল বুদ্ধিজীবিদের ঢাকার রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে যেয়ে হত্যা করেছিল হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। সেদিন তাদের উদ্দেশ্য একটাই ছিল দেশ ও জাতিকে মেধাশূন্য করা। তাদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ১৫ ডিসেম্বর পেরিয়ে ঊষার সূর্য আগমনী বার্তা নিয়ে শুনিয়ে এলো লাল সবুজের মুক্ত স্বাধীনতার গান। বিপর্যস্থ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রাম যুদ্ধ শেষে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৬ ডিসেম্বর আজকের দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিযুদ্ধের যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো। আর এরই সাথে সাথেই শেষ হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। বিশ্বের বুকে লাল সবুজের পতাকা উঁচিয়ে জাতি ঘোষণা করে আজ থেকে আমরা স্বাধীন। স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন দিয়েছে ৩০ লক্ষ মানুষ আর সম্ভ্রম দিয়েছে ২ লক্ষ মা-বোন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মূলত মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা শুরু আর শেষ ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার আনন্দ উল্লাসে সেদিন শূণ্য আকাশে এসএলআর’র ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সদলবলে ছুটে গেছি শার্শার নাভারণ বাজারে। উদ্দেশ্য শার্শার কুখ্যাত তবি খাঁর পিস কমিটির অফিস পানে। আর মুখে গাইছি আমার লেখা রচিত স্বাধীনতার গানটি। আজ আমি আবারও আমার লেখা সে গানটি (যেটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে রচিত) আমার দেশবাসী ভাই বোনদের শোনাচ্ছি।
স্বাধীনতা তুমি মুক্তপ্রাণের জোয়ার স্বাধীনতা তন্বীর ভালোবাসা,
সাড়ে সাতকোটি বাঙ্গালীর প্রাণে বেঁচে থাকার আশা।।
স্বাধীনতা তুমি আকাশের লাল সূর্য-
স্বাধীনতা রণ দামামা তূর্য,
স্বাধীনতা তুমি মায়ের মুখের সতঃস্ফুর্ত ভাষা।।
স্বাধীনতা তুমি কবি নজরুলের ছায়ানট হিন্দোল-
স্বাধীনতা তুমি পদ্মা মেঘনা যমুনার কলকল,
স্বাধীনতা শাশ্বত প্রাণে মৃত্যুঞ্জয়ীর আশা।।
এ হলো আমাদের প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ আনন্দ। দেশ স্বাধীন হয়েছে চুয়ান্ন বছর। কিন্তু দেশের মানুষ পাঁচ দশকেও পায়নি প্রকৃত স্বাদ। পাকিস্তানীরা শাসন শোষণ করেছে তেইশ বছর। তারপর দেশীয় শাসকরা করেছে পাঁচ দশকেরও বেশী কাল। নানা বৈষম্য নির্যাতন হত্যা গুমের মধ্যদিয়ে কেটেছে ফ্যাসিস্টদের শাসন। শেষ রক্ষা হয়নি ফ্যাসিস্টদের জুলাই থেকে আগস্টের ৫ তারিখে ছাত্র জনতার বিব্লব আনদোলন আর বুকের রক্তে সিক্ত হয়ে আমাদের স্বাধীনতা সূর্য অবগাহনের মাধ্যমে ফিরে এলো বাংলাদেশীর বুকে। আমাদের সন্তানেরা জীবন দিল দুই হাজারের উপর আর পঙ্গুত্ব বরণ করলো ত্রিশ হাজারের বেশী। আমাদের এবারের স্বাধীনতা তাই দ্বিতীয় স্বাধীনতা। একাত্তরের শহিদদের আনা লাল সবুজের পতাকা আর চব্বিশের ৫ আগস্টের পূর্ণ স্বাধীনতা দিল দেশকে নতুন করে বিনির্মানের প্রত্যয়। একে কোন ক্রমেই ব্যার্থ হতে দেয়া যাবেনা।
আপনার মতামত লিখুন :