ভারত হাসিনা-কামালকে ফেরত না দিলে হেগের আদালতে যাবে সরকার


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২১, ২০২৫, ১২:০৪ অপরাহ্ণ / ০ Views
ভারত হাসিনা-কামালকে ফেরত না দিলে হেগের আদালতে যাবে সরকার

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ চূড়ান্ত# মানবপাচার ও অভিবাসী চোরাচালান অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন# আগামী ৩-৪ কর্মদিবসের মধ্যে গণভোট আইন #  আইন উপদেষ্টা 

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫ এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ভূমি ব্যবহার, নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ খসড়া চূড়ান্ত ও নীতিগত অনুমোদন এবং মানবপাচার ও অভিবাসী চোরাচালান প্রতিরোধ ও দমন অধ্যাদেশের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের বিচারের আকাক্সক্ষা পূরণ করার জন্য এই দায়িত্ব পালনে ভারত যেন প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তার দায় পালন করে, সে জন্য ভারতকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমরা চিঠি দিচ্ছি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ভারত থেকে ফেরত আনতে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল এ তথ্য জানান। আইন উপদেষ্টা বলেন, আশা করি, ভারত তাদের ফেরত দেবে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) যাওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়নি। অভ্যুত্থানের পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও ভারতে অবস্থান করছেন। জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত সোমবার শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদন্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-১। আসিফ নজরুল আরো বলেন, একই সঙ্গে এই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দেশে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক যে অপরাধ আদালত রয়েছে সেখানে আমরা কোনো রকম অ্যাপ্রোচ করতে পারি কি না, সেটা বিচার-বিবেচনা করার জন্য আমরা অচিরেই বসে সিদ্ধান্ত নেব।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা এলেও এ সংক্রান্ত আইনের (অধ্যাদেশ) অপেক্ষায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে আগামী তিন থেকে চার কার্যদিবসের মধ্যে গণভোট আইন করা হবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, গণভোট আইন আমরা খুব দ্রুত করতে যাচ্ছি। এই উইকে (এ সপ্তাহে) করে ফেলবো। ধরেন আগামী তিন বা চার কার্যদিবসের মধ্যে হয়ে যাবে। এর আগে গত ১৩ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সরকার কাজ করছে বলে জানান। ওই নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। আইন উপদেষ্টা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোটের আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের মতো গণভোট ফেব্রুয়ারি প্রথমার্ধে একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হবে না। নির্বাচন উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে। গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেছিলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোটের আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের মতো গণভোট ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংস্কারের লক্ষ্য কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হবে না। নির্বাচন আরো উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে। গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে। চারটি বিষয়ে একটি প্রশ্নে হবে গণভোট। ভাষণে প্রশ্ন পড়েও শোনান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, প্রশ্নটি হবে এ রকম : ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্ন লিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন? নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।

আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে। চূড়ান্ত অনুমোদন পেল সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, কার্যকরে অন্তত দুই মাসের অপেক্ষা চূড়ান্ত অনুমোদন পেল সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, কার্যকরে অন্তত দুই মাসের অপেক্ষা. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে। জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।

জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে আপনি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে আপনার মতামত জানাবেন। গণভোটে পাস হলে আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। আর সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে। ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে বাংলাদেশে ফেরাতে ভারত সরকারকে চিঠি দিতে যাচ্ছে সরকার। এর আগে হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে বাংলাদেশে ফেরাতে ভারতে চিঠি পাঠাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বর্তমানে সেই চিঠি প্রস্তুত হচ্ছে। তবে সেখানে রায়ের কপি পাঠানো হবে না।

গত মঙ্গলবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। আইন উপদেষ্টা বলেন, আজকে আরেকটা ঐতিহাসিক রায় হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পেয়েছিলাম। এটা আমাদের ভোটের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আমরা বেশ কয়েকটি সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন দেখেছিলাম। সবসময় দেখতাম ক্ষমতাসীন দল পরাজিত হতো এবং এটা আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক মনে হতো। এছাড়া বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলগুলোর ব্যর্থতা থাকে, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে হতো। খুবই আনফরচুনেটলি আমাদের সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে রায় দিয়ে এটাকে অবৈধ করা হয়। এরপর এটার সুযোগ নিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটা বাতিল করে।

তিনি আরো বলেন, মাসখানেক আগের একটা রায়। সাবেক প্রধান বিচারপতি খাইরুল হক সাহেব যেভাবে অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধভাবে যে রায় দিয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ। সেই রায়টি বাতিল হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। এটা কার্যকর হবে আগামী সংসদ নির্বাচনের পরে। কারণ, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এখন সংসদের অস্তিত্ব নেই এবং আমাদের উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আগামীতে যে সংসদ গঠিত হবে, সেই সংসদ যখন ভেঙে যাবে, তার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সভায় ভূমি ব্যবহার, নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ খসড়া চূড়ান্ত ও নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। গত বছরের ৮ আগস্ট থেকে উপদেষ্টা পরিষদের ৫১টি বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকের একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, টেলিযোগাযোগ সংশোধন অধ্যাদেশ- ২০২৫ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু আরো আলোচনার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রেস সচিব জানান, এছাড়া আমদানি নীতি নিয়ে আলাপ হয়েছে সভায়, সেটি আরো অধিকতর আলোচনার জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফেরত পাঠানো ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের বিষয়ে আলাপ হয়েছে। এটা নিয়ে আরো আলোচনা হবে। উপদেষ্টা পরিষদে মোট ২৫১টি সারসংক্ষেপ উপস্থাপিত হয়েছে এবং আলোচনা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ৩৯৪টি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।