বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে সাহসী ও ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের পাশে দাঁড়াতে কংগ্রেসে তাঁর সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য জেমি রাসকিন। একই সঙ্গে তিনি মানবাধিকার রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তায় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
৭ জুন ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেসের অধিবেশনে ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য জেমি রাসকিন এ আহ্বান জানান। মার্কিন কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কংগ্রেস অধিবেশনের রেকর্ড থেকে তাঁর এই বক্তব্য পাওয়া গেছে।
মেরিল্যান্ড থেকে নির্বাচিত মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য জেমি রাসকিন টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন সরকার। ওই নিষেধাজ্ঞার চার মাস আগে, অর্থাৎ গত বছরের আগস্টে মার্কিন কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশনের এক আলোচনায় গুম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
৭ জুন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে বক্তৃতাকালে জেমি রাসকিন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে টম ল্যান্টোস মানবাধিকার কমিশনের আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বাংলাদেশের এসব গুমের ঘটনা মুক্তচিন্তা, বিরোধী রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের গা হিম করা অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির এই মার্কিন কংগ্রেস সদস্য বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমি সংহতি প্রকাশ করছি। সে দেশের সরকার যখন অব্যাহতভাবে জনগণের মৌলিক মানবাধিকার ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে, তখন আমি বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করছি। অবনতিশীল মানবাধিকার এবং নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, নারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, মানবাধিকারকর্মী ও শরণার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে।’
র্যাব আইনের শাসন, মানবাধিকার ও মৌলিক নাগরিক অধিকারকে অবমূল্যায়ন করেছে বলে উল্লেখ করে জেমি রাসকিন বলেন, গত বছরের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার ভয়ভীতি ও হয়রানির মাধ্যমে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। গুমের শিকার অন্তত ১০ ব্যক্তির বাড়িতে রাতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। এ সময় গুমের শিকার ব্যক্তিদের কয়েকজন স্বজনের কাছ থেকে জোর করে সই নেওয়া হয়েছে, যাতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনেরা বলছেন, তাঁদের আপনজন গুম হননি।
মার্কিন কংগ্রেস সদস্য বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে। তারা বলছে, করোনা মহামারিকালে সে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েছে। গণমাধ্যমকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীরা সরকারের দুর্নীতি ও কোনো নীতির সমালোচনা করলে কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে তাঁদের ওপর নিয়মিতভাবে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।
ডেমোক্র্যাট এই কংগ্রেস সদস্য বলেন, গণমাধ্যমকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীরা সরকারের দুর্নীতি ও কোনো নীতির সমালোচনা করলে কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে তাঁদের ওপর নিয়মিতভাবে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। রাজনৈতিক সভা ও সরকারবিরোধী বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ঠেকাতে কোভিড-১৯ নীতিমালা ব্যবহার করা হয়েছে। করোনা মহামারিকালে নারী ও নৃতাত্ত্বিক কর্মীদের ওপর সহিংসতা বেড়েছে।
গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গটি তুলে জেমি রাসকিন বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ৬ শতাধিক মানুষকে গুম এবং ২০১৮ সাল থেকে ৬০০ জনের কাছাকাছি মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার জন্য র্যাব ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়ী বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এসব গুম-খুনের টার্গেট ছিলেন বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা।
আপনার মতামত লিখুন :