মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ফিলিস্তিনবাসীর দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। রোববার (২০ এপ্রিল) খ্রিস্ট ধর্মীয় উৎসব ‘ইস্টার সানডে’ উপলক্ষে দেয়া ভাষণে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে জড়ো হওয়া হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষের সামনে তিনি এ আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলের ১৮ মাসব্যাপী হামলার ফলে সৃষ্ট শোচনীয় মানবিক বিপর্যয়ে নিন্দা জানান তিনি। সেই সঙ্গে, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে পোপ ফ্রান্সিস বলেছিলেন, ‘আমি যুদ্ধরত সব পক্ষের কাছে আবেদন করছি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করুন, জিম্মিদের মুক্তি দিন এবং শান্তির প্রত্যাশী ক্ষুধার্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।’
শুধু ‘ইস্টার সানডে’র দিনেই নয়; আগেও ইসরাইলি সামরিক আগ্রাসনের সমালোচনা করে গেছেন ফ্রান্সিস। গত জানুয়ারিতে তিনি গাজার পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত গুরুতর এবং লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছিলেন। একই সঙ্গে অঞ্চলটিতে ইসরাইলি ‘গণহত্যার’ তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছিলেন।
২০১৫ সালে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে ঐতিহাসিক স্বীকৃতি দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকানের ৮৬ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো পোপ সরাসরি ও আনুষ্ঠানিকভাবে একটি দখলকৃত ভূখণ্ডকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন। যা পশ্চিমা বিশ্ব ভালোভাবে মেনে নিতে পারেনি।
এটি ছিল পোপ ফ্রান্সিসের ব্যতিক্রমী, সাহসী ও নীতিগত পদক্ষেপ। সেই সময় অনেক দেশ যেখানে রাজনৈতিক ভারসাম্যের কারণে দোটানায় ছিল, সেখানে পোপ ফ্রান্সিস শুধু মানবিক বিবেচনায় ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে দৃঢ়তার সঙ্গে অবস্থান নেন।
মানবিকতা ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতি তার গভীর দায়বদ্ধতা বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হতে থাকে ২০১৩ সালে পোপ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই। তিনি তার পুরো পোপত্ব কালীন সময়জুড়েই দরিদ্র, নিপীড়িত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পক্ষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ব রাজনীতি একপেশে ও সুবিধাবাদী। ফিলিস্তিনিদের প্রতি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার অব্যাহতভাবে অবহেলিত। ধর্মীয় সহনশীলতা ও অভিন্ন আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাস করতেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি মনে করেন, মুসলিম-খ্রিস্টান-ইহুদি সবাই আদমের সন্তান এবং অভিন্ন ঐতিহ্য বহন করে। তাই ফিলিস্তিনের মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার, পবিত্র স্থানে স্বাধীনভাবে প্রবেশাধিকার ও বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা উচিত।
ফিলিস্তিনে ক্যাথলিকদের নিরাপত্তা ও উপস্থিতি: ভ্যাটিকান চায়, ফিলিস্তিনে বসবাসরত খ্রিস্টান সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় জীবনযাপন করুক। এই স্বীকৃতি সেই নিরাপত্তার প্রতীকও বটে। ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে পোপ ফ্রান্সিসের স্বীকৃতি ছিল তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বার্তা, যা ফিলিস্তিনবাসীর স্বাধীনতার দাবিকে আন্তর্জাতিক মহলে জোরদার করে।
২০১৪ সালে পোপ ফ্রান্সিস তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ফিলিস্তিন গিয়ে দেশটিকে স্বীকৃতি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সে আশ্বাসের ভিত্তিতেই দেশটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করে ভ্যাটিকান। পরের বছর ১৩ মে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া বিষয়ে পোপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভ্যাটিকান ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়।
দেশটির কর্মকর্তারা জানান, তারা ইসরাইলের আগ্রাসনে হতাশ। ইসরাইল আসলে শান্তি চায় না, তাই তারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য নথিপত্র ঠিক করতে শুরু করেছে। খুব তাড়াতাড়ি তা সই করে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হবে।
ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ওই আলোচনায় পোপ বলেছিলেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের সম্পর্কোন্নয়নে ২০ বছর ধরে কাজ করছে ভ্যাটিকান।
আপনার মতামত লিখুন :