পতিত হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছর এবং তার আগের সরকারগুলোর ভুল নীতি ও অনিয়ম-দুর্নীতিতে দীর্ঘদিন থেকেই বিপর্যস্ত দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও এখনও দুর্বল দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা। অথচ বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজেগুলোতে মানসম্মত শিক্ষার সুনাম পাশ্বর্বর্তী বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসাশান্ত্রে উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশে পড়তে আসেন। এসব শিক্ষার্থীরা তাদের দেশে গিয়ে চিকিৎসা সেবা মান বাড়ালেও বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা এখনো অনেক দেশ থেকে পিছিয়ে। যে কারণে প্রতিবছর চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া অনেকটা নিয়তি হিসেবেই মানছেন সেবা গ্রহীতারা। চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায় কয়েক লাখ বাংলাদেশি। তবে বেশিরভাগের গন্তব্যই ভারত। একটু ভালো সেবার লক্ষ্যে প্রতিবছর দেশ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি ভারতে চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সক্ষমতা না থাকা বা দুর্বলতার সুযোগে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া অর্থনৈতিক প্রভাব যতটা তীব্র, ততটাই উদ্বেগের।
তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা ভারতে পলায়ন করলে ভারত সরকার সকল ভিসা বন্ধ করে দেয়। এমনকি মেডিকেল ভিসাও প্রায় বন্ধ। যদিও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ মেডিক্যাল ট্যুরিজম খাতটি ভারতের শিকারে পরিণত হয়েছে। আশি ও নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের কিছুসংখ্যক অভিজাত শ্রেণির লোক চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতো। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়া জোয়ার বা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। তথ্য মতে, ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন বাংলাদেশি স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিদেশ ভ্রমণ করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। এটা নিছক পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি আমাদের স্বাস্থ্যসেবা খাত নাগরিকদের চাহিদার সঙ্গে কতটুকু তাল মেলাতে পারছে, তার ইঙ্গিত দেয়।
অবশ্য ভারত সরকারের ভিসানীতি ও বাংলাদেশের সঙ্গে রুঢ় আচরণ দেশের স্বাস্থ্যখাতের বিকাশের সুযোগ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় দেশের স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মেডিক্যাল হাব হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এটা করতে পারলে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, মালদ্বীপের রোগীরাও ভারতে চিকিৎসা সেবা নিতে না গিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। বিশেষজ্ঞরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের মেডিকেল ট্যুরিজমকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানোর সুযোগ দেখছেন।
এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে দেশেই থাকবে বিপুল পরিমাণ টাকা। আর এ জন্য নির্ভুল রোগ নির্ণয়, স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের আচরণ পরিবর্তন, দুর্নীতি কমানোসহ দেশেই বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। অর স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে না পারলে অনেক রোগীই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যদিও সরকার স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানেই এখন বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। আস্থা সংকটের কারণ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও স্বাস্থ্য গবেষক প্রফেসর সৈয়দ আব্দুল হামিদ ইনকিলাবকে বলেন, ভারত ভিসা বন্ধ করায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে হবে। দেশ থেকে সেবা নিয়ে যদি তারা সন্তুষ্ট হয়ে যায় তাহলে হয়ত রোগীরা বিদেশমুখী হবেই না। তখন হয়ত দেশের কাঠামোটা গড়ে উঠলো। এইটা একটা বড় কাজ হবে। এই জায়গায় আমার মনে হয় যে, সরকারের তরফ থেকে একটা আলোচনা দরকার এবং বেসরকারি হাসপাতাল, মালিক, ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের যারা আছেন তাদেরকেও কিন্তু এই সুযোগটা কাজে লাগান দরকার বলে উল্লেখ করেন ইনস্টিটিউটের সাবেক এই চেয়ারম্যান।
সূত্র মতে, চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায় কয়েক লাখ বাংলাদেশি। তবে বেশিরভাগের গন্তব্যই ভারত। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর খুবই সীমিত হয়েছে ভারতের মেডিকেল ভিসা। খুব গুরুতর রোগীরাও ভিসা পাচ্ছেন না। এতে থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইরান ও সিঙ্গাপুর যাওয়ার হার বেড়েছে। ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, লিভারের নানা সমস্যাসহ প্রায় ১২ ধরনের রোগের চিকিৎসা নিতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার হার বেশি।
অথচ দেশের অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানেই এখন বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। বিশেষ করে বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান নিউরো সাইন্স ইনস্টিটিউট, চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, নাক-কান গলা ইনস্টিটিউট, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, গ্রাষ্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইনস্টিটিউটসহ একাধিক বিভাগে আন্তর্জাতিক মানের সেবা ও জটিল জটিল অপারেশন সম্পন্ন হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে রাজধানীর শাহবাগে নির্মাণ করা হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে ইউনাইটেড, এভারকেয়ার, স্কয়ার গলাকাটা চিকিৎসা ব্যয় নিলেও সরকার সঠিক নীতি গ্রহণ করলে সেবার মান বাড়ানো সম্ভব।
যদিও মধ্যম মানের বারডেম, স্পেশালাইজড হাসপাতাল শ্যামলী, ল্যাব এইড, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল, এএমজেডসহ একাধিক হাসপাতালে কিছুটা হলেও সেবার মান ভালো। যদিও এসব হাসপাতাল মান থেকে অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। অবশ্য দেশের সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা, কম জনবল এবং বেসরকারি খাতের অতি মুনাফার মানসিকতার অভিযোগ পুরোনো। এ সব সংকটের সমাধান না হলে ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন রোগীরা। তাই দ্রুত দেশের চিকিৎসা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী বলে মত সংশ্লিষ্টদের। আর এটা করতে পারলে অচীরেই বাংলাদেশেই গড়ে উঠবে ‘মেডিকেল ট্যুরিজম’ বা ‘মেডিকেল হাব’। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর উচ্চ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলো ভারতে না গিয়ে বাংলাদেশে আসবেন চিকিৎসার জন্য।
মেডিক্যাল ট্যুরিজম বা চিকিৎসা পর্যটন বা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নেওয়া একটি দেশের স্বাস্থ্য খাতের ব্যর্থতা প্রকাশ করে। বর্তমানে চিকিৎসা পর্যটন হলো ১০০ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক ব্যবসা- যা অর্থনীতিকে পুনর্নিমাণ করে এবং স্বাস্থ্যসেবাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে। ভারত, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো চিকিৎসা পর্যটনের পাওয়ার হাউস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলছেন, বাংলাদেশে ‘মেডিকেল হাব’ গঠন চ্যালেঞ্জটি বিশাল, কিন্তু এর মধ্যেই সম্ভাবনার বীজ লুকিয়ে আছে-শুধু একটি সংস্কারকৃত নতুন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নয়, বরং এমন একটি পুনর্গঠিত জাতীয় পরিচয়ের জন্য। যা সব নাগরিকের মঙ্গল ও সমতার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়। এমন একটি বাংলাদেশ আমরা গড়তে পারি, যেখানে বিশ্বমানের হাসপাতালগুলো সারাদেশে বিস্তৃত থাকবে, যা শুধু দেশের নাগরিকদেরই নয়, বরং বাইরের রোগীদেরও আকৃষ্ট করছে।
এটি কোনো অবাস্তব স্বপ্ন নয়, বরং একটি বাস্তব সম্ভাবনা, যা সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপের ওপর নির্ভরশীল। আর এ লক্ষ্যে সরকারের উচিত স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোখাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা, বিশেষায়িত স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া। যা সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত। বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা জায়ান্টদের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা এই অগ্রগতিকে দ্রুততর করতে পারে, যা নিয়ে আসবে দক্ষতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সমন্বয়।
এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েটস ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার ইনকিলাবকে বলেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে মানসম্মত করতে হলে অবশ্যই সেবার মানসিকতা ও দুর্নীতি দূর করতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশকে তার চিকিৎসা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিগুলোকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করতে হবে এবং মেধা ধরে রাখতে শক্তিশালী প্রণোদনা ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে। যাতে মেধাবীরা দেশে ফিরে আসে অত্যাধুনিক সুবিধা এবং পেশাগত সন্তুষ্টি ও প্রতিযোগিতামূলক বেতনের আকর্ষণে বিদেশে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশি ডাক্তাররা দেশে ফিরে এসে কাজ করেন। দুর্নীতি ও অদক্ষতাকে মোকাবিলা করার জন্য স্বচ্ছতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা এই প্রচেষ্টাগুলোর ভিত্তি হতে হবে বলে উল্লেখ করেন এই গবেষক।
ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার বলেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে গমনের অর্থনৈতিক প্রভাব যতটা তীব্র, ততটাই উদ্বেগের। বাংলাদেশ প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হারায়, যার বেশিরভাগই ভারতের দ্রুত-বর্ধনশীল স্বাস্থ্যখাতকে শক্তিশালী করেছে। এই অর্থপ্রবাহ কেবল একটি আর্থিক বিষয় নয়- এটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের সমস্যা, যা দেশে উন্নত সুযোগ-সুবিধার অভাব থেকে শুরু করে দীর্ঘস্থায়ী দুর্নীতি ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার মতো ঘাটতিগুলোকে সামনে আনে। তাই দেশের স্বাস্থ্যখাতের মান ফেরাতে এবং রোগী বান্ধব করতে এখনই সময় সময়োপযোগী নীতি প্রণয়ন।
বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএইচআরএফ) সভাপতি রাশেদ রাব্বি ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিবছর বিদেশে ব্যয় করা বিলিয়ন ডলারগুলো যদি দেশের স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোতে পুনঃবিনিয়োগ করা যেতো, তবে আমাদের অর্থনীতিতে এর নানামুখী সুফল পাওয়া যেতো। তিনি বলেন, ভারতে ভিসা বন্ধ হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের দেশের স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলে দেশের স্বাস্থ্যখাতকে পরিবর্তন করা সম্ভব। রাশেদ রাব্বি দেশের স্বাস্থ্যখাতে একটি বিশেষ আইন করারও দাবি জানান।
তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিবীদ, সরকারের উর্ধ্বতনদের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপি, ব্যবসায়ী ও আমলাদেরকে অবশ্যই দেশে চিকিৎসা নেওয়ার আইন করেত হবে। বিশেষ প্রয়োজনে তদারকি সংস্থার অনুমতিতে বিদেশে চিকিৎসা নিতে হবে। আর এটা হলেই দেশের চিকিৎসা সেবার অব্যবস্থাপনা ও জনবল সঙ্কটসহ নানাবিধ সীমাবদ্ধতা দূর হবে। আর সঠিক তদারকি থাকলে বেসরকারি হাসপাতালও গলাকাটা ব্যবসা থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হবে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানী প্রফেসর লিয়াকত আলী বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের ভিড় তো আর সরকারি হাসপাতারেল মতো নয়। বেসরকারি হাসপাতালে যে পরিমাণ অর্থ রোগী খরচ করে সে পরিমাণ সেবা পায় কিনা তার মান নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসকদের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশ্ন রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ভারতের চাইতে আমাদের চিকিৎসাসেবা কোনো অংশেই কম না। যেসব রোগী আমাদের ভারতে যায়, আসার পর তাদের ফিডব্যাক নেই। কিন্তু সেখানে তারা কি চিকিৎসা দিল আমরা কি চিকিৎসা দিলাম এইটার মধ্যে আমি খুব একটা পার্থক্য পাই না।
আপনার মতামত লিখুন :