বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী আসেন ফ্রান্সের ল্যুভর জাদুঘরে। এ জাদুঘরটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অমর সৃষ্টি মোনালিসা ছবিটি। পৃথিবীর সব থেকে চর্চিত শিল্পকর্মটির সামনে যখন পৌঁছবেন, তখন বুলেটপ্রুফ কাচের আড়ালে থাকা ‘ছোট্ট’ ছবিটিতে রহস্যময়ীর অবিস্মরণীয় হাসি ও কাব্যিক সত্তা আপনাকে ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ করে দেবেই।
ল্যুভর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, মোনালিসাকে তার বর্তমান স্থান থেকে সরিয়ে একটি পৃথক বিশেষভাবে নির্মিত কক্ষে রাখা হবে। এই ঘোষণা দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জাদুঘর সংস্কার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মোনালিসাকে এবার সরানো হবে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগমের কারণে জাদুঘরের অন্য শিল্পকর্মের প্রতি মনোযোগ দেয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ বলে জানানো হয়েছে। অতিরিক্ত ভিড়ের ফলে জাদুঘরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং শিল্পকর্ম সংরক্ষণে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
ল্যুভর কর্তৃপক্ষের মতে, এই স্থানান্তরের ফলে দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা উন্নত হবে, পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পকর্মও তাদের প্রাপ্য গুরুত্ব পাবে। ২০৩১ সালের মধ্যে এ সংস্কার কাজ শেষ হবে বলে ঘোষণা দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। পরবর্তীতে এ ছবিটি দেখতে হলে দর্শনার্থীদের আলাদা করে টিকিট কেটেই এ চিত্রকর্ম দেখতে হবে। আগামী জানুয়ারি থেকে প্রবেশমূল্যের পরিবর্তন আনা হবে। এখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাইরের দর্শনার্থীদের বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের পর্যটকদেরও ল্যুভর জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
ল্যুভর পরিচালক লরেন্স দে কার সতর্ক করে বলেছে, জাদুঘরটিতে ভিড় আগে থেকে অনেক বেশি বেড়ে গেছে এবং এ কারণে অবকাঠামোগত সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন জাদুঘরে আসা ৩০ হাজার দর্শনার্থীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশই লিওনার্দো দা ভিঞ্চির এই চিত্রকর্ম দেখতে আসেন। তবে এটি যেন ধৈর্যের পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন ভিড় সামলাতে দর্শনার্থীদের সাল দে জেতা হলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সেখানে দর্শকরা গড়ে মাত্র ৫০ সেকেন্ডের জন্য তারা ছবিটি পর্যবেক্ষণ ও ছবি তোলার সুযোগ পান।
ম্যাডাম দে কার্স তার চিঠিতে লিখেছেন, জনসাধারণ কোনোভাবেই শিল্পীর কাজকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারছে না, যা আমাদের পুরো জনসেবামূলক মিশনকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।
তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়েছে। সমালোচকদের মতে, মোনালিসা শুধু একটি চিত্রকর্ম নয়, এটি ল্যুভর প্রতীক এবং একে আলাদা কক্ষে সরানো এই জাদুঘরের ঐতিহ্যের পরিপন্থী।
শিল্পবিশ্বের একাংশের মতে, এই পদক্ষেপ শিল্পের গভীর ঐতিহ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে আধুনিকীকরণের নামে একটি কৃত্রিম অভিজ্ঞতা তৈরি করার চেষ্টা করছে।
সূত্র: বিবিসি
আপনার মতামত লিখুন :