যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ /
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে

২১ সেপ্টেম্বর,রয়টার্স, এএফপিঃ আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা। আগামী ৫ নবেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হলেও এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি রাজ্যে আগাম ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন বহু নাগরিক।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক মাসেরও বেশি সময় আগেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। যেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে ভোটপ্রদান শুরু করেছে দেশটির মানুষ। গত শুক্রবার ভার্জিনিয়া, সাউথ ডাকোটা ও মিনেসোটার বাসিন্দাদের দেখা গেছে সশরীরে ভোটকেন্দ্রে হাজির হতে। খুব ভোরবেলায় ভার্জিনিয়ার আর্লিংটন নির্বাচন কেন্দ্রে ৫৬ বছর বয়সী টম কিকেনি ভোট দিতে এসে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আপনি এটাই অনুভব করতে পারছেন যে আমরা এই প্রক্রিয়ার অংশ।’ তার স্ত্রী ৫৫ বছর বয়সী মিশেল জানান, আগাম ভোট দিয়ে তার বন্ধু ও প্রতিবেশীর সামনে উদাহরণ তৈরি করে তিনি খুব সুখী অনুভব করছেন।

ভোট প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের রয়েছে নিজস্ব নিয়মকানুন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ডাকযোগে ও সশরীরে আগাম ভোট প্রদান। এছাড়া নির্বাচনের দিন ভোটপ্রদান অথবা ওই তিনটি প্রক্রিয়ার সংমিশ্রণ। যার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন প্রার্থীরা।

ট্রাম্পকে ‘ভ-’ বলেছেন কমলা : রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার দল গর্ভপাত নিয়ে ‘ভ-ামি’ করছেন বলে অভিযোগ কমলা হ্যারিসের। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা গতকাল শুক্রবার এভাবেই তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে নির্বাচনী সমাবেশে আক্রমণ করেছেন। আগামী ৫ নবেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা ও ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জর্জিয়ার আটলান্টায় শুক্রবার নির্বাচনী সমাবেশ করেন কমলা। সমাবেশটিতে মূলত নারী সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন।

জর্জিয়ায় সম্প্রতি গর্ভধারণ সংক্রান্ত জটিলতায় দুজন নারীর মৃত্যু হয়। তাদের মৃত্যুর জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেন কমলা। যুক্তরাষ্ট্রের যেসব অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত নিষিদ্ধ, জর্জিয়া তার একটি। সমাবেশে কমলা বলেন, ‘…এই ভ-রা এমনভাবে কথা বলতে চান যে, এটার মধ্যে (গর্ভপাত ইস্যু) নারী ও শিশুদের সেবার সর্বোত্তম স্বার্থ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভালো কথা, যখন আমেরিকার নারী ও শিশুদের সেবাযতœ নিয়ে কথা বলার সময় আসে, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন, কোথায় ছিলেন আপনারা? কত বড় সাহস তাদের।’ দুই মাস আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালে সামনে চলে আসেন কমলা। পরে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই কমলা গর্ভপাত প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বারবার এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘ট্রাম্প গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞা’।

যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ২০টি অঙ্গরাজ্যে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে গর্ভপাত নিষিদ্ধ। জর্জিয়ায় গর্ভধারণের ছয় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইনে গর্ভপাত নিষিদ্ধ। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জর্জিয়া থেকে দোদুল্যমান রাজ্য উইসকনসিনে যান কমলা। সেখানে শুক্রবার রাতে ম্যাডিসনে এক নির্বাচনী সমাবেশে কমলা পুনরায় একই প্রসঙ্গে কথা বলেন। সেখানে তিনি গর্ভপাত নিষিদ্ধ আইনকে ‘অমানবিক’ বলে বর্ণনা করেন। কমলা বলেন, ‘এটা একটি স্বাস্থ্যসেবা-সংকট এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প এর কারিগর।’

এদিন দুটি নির্বাচনী সমাবেশেই কমলা আম্বার নিকোল থরম্যানকে নিয়ে কথা বলেন। ২৮ বছর বয়সী এক সন্তানের জননী থরম্যান গর্ভপাত করাতে গর্ভপাতের ওষুধ খাওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার শরীরে বিরল এক জটিলতা দেখা দেয় এবং অস্ত্রোপচার করার সময় তিনি মারা যান। ২০২২ সালে ওই ঘটনা ঘটে। আটলান্টায় কমলা বলেন, ‘আমরা এটা নিশ্চিত করব যে আম্বারের নাম শুধু একটি সংখ্যা হিসেবে স্মরণে রাখা হবে না।’ জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপক অপরাহ্ উইনফ্রে আটলান্টা সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন। সমাবেশে যোগ দেওয়ার এক দিন আগে কমলা থরম্যানের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।

আগাম ভোট : কমলা যখন সমাবেশে কথা বলছিলেন, তখন ভার্জিনিয়া, মিনেসোটা এবং সাউথ ডাকোটায় আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। ভোটের জন্য নির্ধারিত দিনের ৪৬ দিন আগেই। ম্যাডিসনে কমলা বলেন, ‘নির্বাচন আসলে এখানে। এখানে আমাদের কাজ করতে হবে, উজ্জীবিত করতে হবে, সংগঠিত হতে হবে এবং একজোট হতে হবে।’ ভোটের নির্ধারিত দিনের আগে এই আগাম ভোট এবং ডাকযোগে পাঠানো ভোট নিয়ে এর আগে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০২০ সালে বাইডেনের বিরুদ্ধে নিজের জয়ের যে মিথ্যা দাবি ট্রাম্প করেছিলেন সে দাবির মূলেও ছিল এই আগাম ও ডাকযোগের ভোট।

নির্ধারিত দিনে ভোট দিতে যেসব ভোটারদের অসুবিধা থাকে, যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ রাজ্যই তাদের আগাম ভোট দেওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকে।