জুনে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের শহরগুলিতে আঘাত হানার সময় ইসরায়েলের থাড প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব দেখা দিয়েছিল। এসময় মিত্র ইসরাইলকে রক্ষায় তেল আবিরের কাছে প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র হস্তান্তর করতে সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে ইসরাইলকে সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানায় রিয়াদ। বিষয়টি অবগত রয়েছেন দুই মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘‘যুদ্ধের সময়, আমরা সকলকে অনুদান দিতে বলেছিলাম। যখন তাতেও কাজ হয়নি তখন আমরা চুক্তি করার চেষ্টা করেছি। এটি একটি দেশের জন্য লক্ষ্য ছিল না।’’
সৌদি আরব ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য উপযুক্ত অবস্থানে ছিল এবং মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের জোর দিয়ে বলতে আগ্রহী ছিলেন, ইরান তাদের (সৌদি আরবের) পাশাপাশি ইসরায়েলের জন্যও হুমকি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেল সমৃদ্ধ উপসাগরীয় রাষ্ট্রটিতে ইতিমধ্যেই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে। সম্প্রতি এটি হুথি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল।
ইরান ও ইসরায়েল যখন নিজেদের মধ্যে লড়াই করছিল, তখন সৌদি নিজস্ব সার্বভৌম তহবিল দিয়ে কেনা প্রথম থাড ব্যাটারি গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। প্রকৃতপক্ষে, ইসরায়েল ও ইরান যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর মাত্র নয় দিন পরে, ৩ জুলাই সৌদি সামরিক বাহিনী ব্যাটারিটি উদ্বোধন করে।
উদ্বোধনের ঠিক আগে, মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন, ইসরায়েলে ইরানের ব্যাপক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মার্কিন ইন্টারসেপ্টরের (প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র) মজুদ ‘ভয়াবহ পর্যায়ে’ নামিয়ে আনবে।
মিডল ইস্ট আই প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে, ইসরায়েলের মার্কিন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্টরের মজুদ এবং ইসরায়েলের অ্যারো ইন্টারসেপ্টরের অস্ত্রাগারের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং দ্য গার্ডিয়ান পরে মিডল ইস্ট আই এর প্রতিবেদনটি বিষয়টি নিশ্চিত করে।
পরে দ্য গার্ডিয়ান জুলাই মাসে প্রতিবেদন করে, সংঘর্ষের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রয়োজনের তুলনায় প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্টরের মজুদ ছিল প্রায় ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ পেন্টাগনের বিশ্বব্যাপী সব ধরনের মার্কিন সামরিক অভিযানের জন্য যে পরিমাণ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্টর প্রয়োজন তার চার ভাগের এক ভাগ অবশিষ্ট আছে তাদের কাছে। একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এই গোপন সংখ্যাটি নিশ্চিত করেছেন।
ইসরায়েলের তিন স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আমেরিকান অতিরিক্ত ফায়ারপাওয়ার দ্বারা সহায়তা করা সত্ত্বেও ইরান এসব কিছু ভেদ করে ইসরায়েলি শহরগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে সক্ষম হয়। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলি সরাসরি পাঁচটি ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনায় আঘাত করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের আক্রমণের মাত্রা বিবেচনা করে আমেরিকান এবং ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছু সামরিক পরিকল্পনাকারীর প্রত্যাশার চেয়েও ভালোভাবে টিকে ছিল। কিন্তু ইরান তাদের সিস্টেমের দুর্বলতা কাজে লাগাতে সক্ষম হয়, বিশেষ করে যখন সংঘাত দীর্ঘায়িত হচ্ছিল।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল শুক্রবার জানিয়েছে, কিছু মার্কিন কর্মকর্তা সৌদি আরবের কেনা থাড ইন্টারসেপ্টর নিয়ে ইসরায়েলে পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন, সৌদি আরব ভদ্র মার্কিন প্রস্তাব এবং চুক্তি সম্পাদনের প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করার পরেই এই আলোচনা হয়েছিল।
উভয় মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে আরও জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ইসরায়েলের সাথে ইন্টারসেপ্টর ভাগাভাগি করতে বলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান ইসরায়েলের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লঙ্ঘনে যে সাফল্য দেখিয়েছে কম সুরক্ষিত উপসাগরীয় দেশগুলি অবশ্যই তা লক্ষ করেছে।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের ধোঁয়াশা কেটে যাওয়ার সাথে সাথে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলি গবেষণা করা হচ্ছে এবং ইরান চীনের সহায়তায় দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণ করছে।
একজন আরব কূটনীতিক বলেছেন, ‘‘আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধটি ভালোভাবে শেষ হয়েছে। ইসরায়েল একটি শক্তিশালী জাতি রাষ্ট্রের মুখোমুখি হওয়ার মূল্য ভোগ করেছে।’’ অন্যদিকে, ইসরায়েলি বোমা হামলার তীব্রতা থেকে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করা ইরানও উপসাগরের উপর আরও নির্ভরশীল হয়ে উঠছে।
আপনার মতামত লিখুন :