যৌথ বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যুঃ রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ! দেশজুড়ে তোলপাড়!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৫, ৯:১০ পূর্বাহ্ণ /
যৌথ বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যুঃ রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ! দেশজুড়ে তোলপাড়!

ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমে পুলিশ, র‌্যাবের হেফাজতে নির্যাতনে মানুষের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে দেখা হতো। কারণ এমন ঘটনায় অহরহ ঘটায় মানুষ ওই সব পৈশাচিক ঘটনা শুনতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। ওই সময় যে কত মানুষকে গুম-খুন করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পৈশাচিক নির্যাতনে কত হাজার মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে তার প্রকৃত পরিসংখ্যান নেই। শেখ হাসিনা প্রশাসনযন্ত্রে ‘মাফিয়াতন্ত্র’ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুম-খুনি বাহিনীতে রূপান্তর ঘটিয়েছিল। হাসিনা গণহত্যা করে পালিয়েছে।

এখন অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামল। এখন যৌথ বাহিনীর হেফাজতে অমানবিক নির্যাতনে যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলাম মৃত্যু মানুষ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছে না। কুমিল্লায় এই নিষ্ঠুরতম ভয়ঙ্কর ঘটনার প্রতিবাদ উঠেছে সর্বমহল থেকে। এ নিয়ে চলছে চলছে তোলপাড়। গণমাধ্যমগুলো ‘সেলফ সেন্সর’ করে খবরটি প্রচার করলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। যৌথবাহিনীর হেফাজতে তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনার দ্রুত তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) কুমিল্লার সেনাক্যাম্পে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক অভিহিত করে ওই সেনাক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করার কথা জানিয়েছে। হত্যাকা-ের সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে আইএসপিআর। কিন্তু মানুষ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ‘তদন্ত কমিটি গঠন’ বার্তা এবং আইএসপিআরের তদন্ত কমিটি গঠনের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না।

সোশ্যাল মিডিয়ার নেটিজেনদের বেশির ভাগই বলছেন, সরকারের তদন্ত কমিটি গঠনের অর্থই হলো হত্যাকাণ্ডকে ‘হিমঘরে’ রেখে দেয়া। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসে পাহাড় হাউস এলাকায় সোহাগী জাহান তনুকে খুন করা হয়। তনুর বাবা-মা দাবি করেন, সেনা কর্মকর্তা ওই হত্যাকা- ঘটিয়েছেন। আইএসপিআর সে সময় ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীর বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল। হাসিনার সরকারকে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু ৯ বছরেও তনু হত্যার বিচার হয়নি, হত্যাকারীর নাম জানতে পারেনি। আর বর্তমান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ‘হোমিওপ্যাথি’ কার্যক্রমে মানুষ ক্রমান্বয়ে আস্থাহীন হয়ে উঠছে।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বর্তমানে অবস্থায় যৌথবাহিনীকে মাঠে রাখার ‘প্রয়োজনীয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বলছেন, সেনাবাহিনীর পোশাক দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। র‌্যাবের পোশাক পরে গুম-খুন-নির্যাতন করায় যুক্তরাষ্ট্র ওই বাহিনীর কয়েকজনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা অতি পুরোনো। কিন্তু সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষ এখনো আস্থাশীল। কাজেই সেনা পোশাক পরে জুলুম-নির্যাতন করে র‍্যাবের পরিণতি দেখতে চায় না।

গতকাল দিনভর টক অব দ্য কান্ট্রি ছিল কুমিল্লায় গভীর রাতে বাড়ি থেকে যৌথ বাহিনীর হাতে আটক যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম মৃত্যুর ঘটনা। পৈশাচিক নির্যাতনে এ মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলেছে, এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। এই হত্যাকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলে এমন পৈশাচিক ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

জানা গেছে, মো. তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক। তিনি একই ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা। তৌহিদুল চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। গত রোববার তার বাবা মোখলেছুর রহমানের মৃত্যুর খবরে তিনি বাড়ি আসেন। শুক্রবার তার বাবার কুলখানি হওয়ার কথা ছিল। তৌহিদুলের মা প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। সংসারে তার স্ত্রী ও চার কন্যা সন্তান রয়েছে। বাসায় যখন পিতার কুলখানির আয়োজন চলছিল তখন গভীর রাতে যৌথবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। সেখানে অমানবিক নির্যাতনের কারণে মো. তৌহিদুল ইসলাম মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। নিহতের শরীরে নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন থাকার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বজনরা।

এ নিয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক গণমাধ্যমকে জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে থানা পুলিশকে বলা হয় তৌহিদুল ইসলামকে নেয়ার জন্য। যখন পুলিশের কাছে তৌহিদুলকে হস্তান্তর করা হয়, তখন তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকে কেন আটক করা হয়েছিল বা কীভাবে তিনি মারা গেছেন, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তৌহিদুল ইসলামের ভাই সাদেকুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তারা বাবার কুলখানির আয়োজন নিয়ে কাজ করছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে আসেন। তাদের সঙ্গে পুলিশের পোশাক পরা কাউকে দেখেননি, তবে সাদা পোশাকে পাঁচজন যুবক ছিলেন। বাড়িতে প্রবেশ করেই তারা তৌহিদুলকে আটক করেন। এরপর সবার কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নেন। ঘরে ব্যাপক তল্লাশি করেন। তবে কিছু পাননি। তৌহিদুলকে আটকের কারণ জিজ্ঞেস করলেও তারা কোনো উত্তর দেননি। একপর্যায়ে তাকে গাড়িতে করে নিয়ে যান। ধরে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর শুক্রবার সকালে আবারো সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে এসে ব্যাপক তল্লাশি করেন। তবে কিছু পাননি। সকালেও তৌহিদুল তাদের গাড়িতে ছিলেন। কিন্তু তাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়নি। দূর থেকে তাকে নিস্তেজ মনে হচ্ছিল।

অতঃপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। সাদেকুর রহমান বলেন, শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে ফোন করে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে বলে। হাসপাতালে আসার পর দেখেন তৌহিদুল আর নেই। তার কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত এমনভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে যে, কালো ফোলা জখমের চিহ্ন রয়েছে। পেট, বুক, পিঠ, পা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে শুধুই নির্যাতনের চিহ্ন।

তৌহিদুল ইসলামকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক মোরশেদ আলম। তিনি জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে থানার ডিউটি অফিসার জানান, যৌথবাহিনী আদর্শ সদর উপজেলার ঝাঁকুনিপাড়া এলাকায় গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ সড়কে দ্রুত যাওয়ার জন্য বলেছে। পরে ওসিকে বলে তিনি গাড়ি নিয়ে যান। তখন যৌথবাহিনী তৌহিদুলকে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু তৌহিদুলের অবস্থা খারাপ দেখে তাদেরও সঙ্গে যেতে বললে তারা রাজি হয়নি। পরে তিনি তৌহিদুলকে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, পুলিশ, তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

ঘটনার পর গণমাধ্যমকর্মীরা ইটাল্লা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখেন, তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার স্বামীর জন্য বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। ইয়াসমিনকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছে তৌহিদুলের শিশু ও কিশোরী চার কন্যা। বাবাকে হারিয়ে মায়ের সঙ্গে দিশাহারা তারাও। ইয়াসমিন নাহার বলেন, ‘আমার চারটা মেয়ে এখনো ছোট। আমি এখন কী করব, মেয়েগুলোকে নিয়ে কীভাবে বাঁচব? আমার স্বামী তো কোনো অপরাধ করেনি। তাহলে কেন আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে এভাবে হত্যা করা হলো। আমি পুরো ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং বিচার চাই।’

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘটনা তদন্তে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে। আর আইএসপিআর এক বিবৃতিতে ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক অভিহিত করে সেনাক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে। তারপরও যৌথবাহিনীকে মাঠে রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। তারা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঠেকাতে পলাতক হাসিনা জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামিয়েছিল। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি নির্বিচারে গুলি করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করলেও সেনাবাহিনী জনগণের কাতারে সামিল হওয়ায় হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

হাসিনার পালানোর পর প্রথম সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পাওয়া সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তারা অপরাধীকে গ্রেফতার করতে বা গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারে। শুধু তাই নয়, দুই দফায় সেনাবাহিনীকে দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে গণহত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে যৌথবাহিনী গঠন করে অভিযানে নামানো হয়। কাগজে-কলমে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকলেও গণহত্যাকারী, খুনি ও বিভিন্ন মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বিঘেœ পালিয়ে যান।

সূত্র জানায়, হাজার হাজার পুলিশ, র‍্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ পুরোনো। কিন্তু গত বছরের ১৩ অক্টোবর যশোরে সেনা ও র‍্যাবের পোশাক পরে ডাকাতির সময় আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। গত ২২ জানুয়ারি ঢাকার বনানীতে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়ার সময় চারজন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। চার ডাকাতের দুজন ছিল সেনাবাহিনীর সদস্য। এ অবস্থায় যৌথবাহিনীকে মাঠে রাখা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যৌথবাহিনীর নির্যাতনে যুবদল নেতা নিহতের ঘটনার পর সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহিদ উর রহমান বলেছেন, হাসিনা পালানোর পর পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে গিয়েছিল। পুলিশ কাজ না করায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী গঠন করা হয়। এখন সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখা উচিত কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সেনাবাহিনীর কাজ নয়। এটি পুলিশের কাজ। আমি সেনাপ্রধানকে এ ব্যাপারে সিরিয়াসলি ভাবতে বলব।

প্রতিবাদের ঝড় : কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর হাতে আটক যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলেছে, এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পৃথক বিবৃতি পাঠিয়ে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করা হয়েছে। আইন ও সালিশকেন্দ্র (আসক) বলেছে, এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। রাষ্ট্র কর্তৃক আটক ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আসক এ ঘটনার স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচারিক তদন্ত দাবি করছে এবং দায়ীদের যথাযথ আইনানুগ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানায়।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আনা নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটকের পর নির্যাতনে মৃত্যুর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মানবাধিকার ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এম এস এফ মো. তৌহিদুল ইসলামের নির্যাতনে মৃত্যুর বিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানায়।

এদিকে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে এ ধরনের অমানবিক নির্যাতন ও বিচার-বহির্ভূত হত্যাকা- দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, বিগত দিনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে এ ধরনের গুম, খুন, নির্যাতন, আয়নাঘর, বিচার-বহির্ভূত হত্যাকা- জাতি দেখেছে। দেশবাসী আশা করেছিল অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ওই পরিস্থিতির অবসান হয়ে একটি ন্যায় ও বিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে। অথচ যৌথবাহিনীর হাতে এই বর্বর নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা আমাদের হতবাক করল।