শেখ হাসিনার উসকানির ফাঁদে আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ / ০ Views
শেখ হাসিনার উসকানির ফাঁদে আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা

শেখ হাসিনা। ছবি-সংগৃহীত

  • দলের কর্মকাণ্ড পালন করা থেকে বিরত থাকলেও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার আন্দোলন সংগ্রামের ওপর ভর করে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলা, এমনকি দিল্লীতে বসে সরকারকে উৎখাত করার জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্ধন জোগানোর গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

রাজপথে তৎপর হয়ে উঠেছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। একযোগে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি ঝটিকা মিছিল করায় আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রচেষ্টার বিষয়টি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বমহলে আলোচনা হচ্ছে। তবে পুনর্বাসনের জন্য মদদ কে বা কারা দিচ্ছে তা নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনার ঝড় বইছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছু দিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত ছিল পতিত আওয়ামী লীগ। দলের কর্মকাণ্ড পালন করা থেকে বিরত থাকলেও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার আন্দোলন সংগ্রামের ওপর ভর করে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলা, এমনকি দিল্লীতে বসে সরকারকে উৎখাত করার জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্ধন জোগানোর গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শেখ হাসিনা বরাবরই একরোখা ও জেদী মনোভাবের মানুষ। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ায় কাউকেই আর ভালো থাকতে দিতে চান না। বড় ধরনের চিহ্নিত অপরাধী বাদে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গত ৮ মাস বেশ ভালোই ছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার উসকানির ফাঁদে পড়ে এখন তৃণমূল আওয়ামী লীগও ঘরছাড়া হতে চলেছে। বেশি বিপদে রয়েছে দলটির ত্যাগী নেতাকর্মীরা। কারণ হাইব্রিড নেতারা তো আগেই দেশ ছেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন যেকোনো মুহূর্তে দাখিল হতে পারে। এই বিষয়টি সামনে রেখে শেখ হাসিনার তরফ থেকে আন্দোলন করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে যাতে অন্তর্বর্তী সরকার চাপ অনুভব করে। এই যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ঝটিকা মিছিল হলো এতে আসলে কি লাভ হলো আওয়ামী লীগের? আপাতত দলের কোনো লাভ না হলেও ক্ষতি হয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মিছিল করেছে এখন তারা ঘরে থাকতে পারবে না, অনেকেই হামলা মামলার শিকার হবেন, অনেকেই গ্রেফতার হবেন। একজন ব্যক্তির জন্য পুরো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত এবং পর্যুদস্ত অবস্থায় দিশেহারা হয়ে ছুটোছুটি করবেন।

জানা গেছে, গতকাল রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও মিরপুরে ঝটিকা মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ‘মিথ্যা-বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বিচারের নামে প্রহসন বন্ধের’ দাবিতে ডেমরা থানাধীন রায়ের বাগ ও সাইনবোর্ড এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করে। এ সময় নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে শপথ নেন।

অন্য দিকে সকালে মিরপুর এলাকায় ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পির নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতারা অংশ নেন। মিছিলে তারা ‘শেখ হাসিনা আসছে, রাজপথ কাঁপছে,’ ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এ ধরনের নানা স্লোগান দেন। এর আগে শুক্রবার রাজধানীর উত্তরায় ঢাকা-১৮ সংসদীয় এলাকায় মিছিল করেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল ঢাকার বাইরে খুলনা মহনগরীর জিরো পয়েন্টে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ ঝটিকা মিছিল করে।

কিশোরগঞ্জে মুখে কালো কাপড় বেঁধে জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে মিছিল করে একদল যুবক। এ দিকে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করার পরই তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অন্তত ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এর আগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। জানা গেছে, সম্প্রতি শেখ হাসিনা খুলনা ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে টেলিগ্রামে মতবিনিময় করেন। ওই মতবিনিময়ে তিনি আবার দ্রুত ফিরে আসছেন- এ রকম বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়। এর পর থেকেই জেলার তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উৎসাহিত হয়ে বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা ঝটিকা মিছিল বের করেন।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশকে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উসকানি দিয়ে রাজপথে নামাচ্ছে। এটা গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই অব্যাহত রয়েছে। গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার বিচার চলছে। এ বিচার ঝটিকা মিছিল দিয়ে আটকানো যাবে না। ছাত্র-জনতা সতর্ক রয়েছে। তারপরও বলব, এটা আইনগতভাবেই মোকাবেলা করা উচিত। তিনি আরো বলেন, কিছু আওয়ামী লীগার এখনো মনে করে, শেখ হাসিনা খুব শিগগিরই ফিরে আসছে। তাদেরও প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। তারা ওইসব কথায় আসক্ত হয়ে বেপরোয়া আচরণ করছে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ন্যাপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: ইসমাইল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আওয়ামী লীগ তো কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন না, তাদের এখনো পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকেও নিষিদ্ধ করা হয়নি। যার ফলে তারা মিছিল সভা সমাবেশ করতেই পারে। তিনি আরো বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে তারা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিল। এখন ঝটিকা মিছিল বা অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে হয়তো তারা সক্রিয় হতে চাইছে। এটার মাধ্যমে হয়তো জানান দিচ্ছে, তারা এখনো রাজপথে রয়েছে। বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে রাজপথে থাকবে এটা তো রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ। এটা তাদের রাজনৈতিক অধিকার। সুতরাং এটা দোষের কিছু দেখি না।