সংস্কার প্রতিবেদন থেকে তৈরি নতুন সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন বললেন প্রধান উপদেষ্টা


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ৯:২৪ পূর্বাহ্ণ /
সংস্কার প্রতিবেদন থেকে তৈরি নতুন সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন বললেন প্রধান উপদেষ্টা
  • প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল বুধবার ঢাকায় তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে চারটি সংস্কার কমিশনের প্রধানগণ তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন। কমিশনগুলো হলোÑসংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন -পিআইডি

 সংস্কার প্রতিবেদন থেকে নতুন চার্টার (সনদ), তার ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন এটা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা একটা ঐতিহাসিক মুহুর্ত। বহু রকম রিপোর্ট হয়, কমিটি হয়, রিপোর্ট আসে, গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকতা পালন করি। আজকের আনুষ্ঠানিকতা সেটার বহু ঊর্ধ্বে।

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চারটি সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে একটি বৈঠক হয়। আলোচনার শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তৈরির গুরু দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।

অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেন চারটি সংস্কার কমিশনের প্রধান। তারা হলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ, নির্বাচন-ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সরফরাজ হোসেন।

ড. ইউনূস বলেন, আজকের ঘটনা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কারণ ইতিহাসের প্রবাহ থেকে এই কমিশনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরুত্থান হয়েছে, মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, সেখান থেকে ইতিহাসের সৃষ্টি। আজকের দিনের এই অনুষ্ঠান সেই ইতিহাসের অংশ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা সেই ইতিহাস ধারণ করতে পারছি কি-না, সামনে নিয়ে যেতে পারছি কি-না, সেই ইতিহাসের যে অঙ্গীকার সেই অঙ্গীকার আমরা পূরণ করতে পারছি কি-না, আমরা মানুষের মনোভাব, স্বপ্নকে এর মধ্যে ধারণ করতে পেরেছে কি না, সেটা মূল বিষয়। আজকে তার যাত্রা শুরু হলো, সেই ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহে। একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এর কাঠামো রচনার কাজ আপনাদের হাতে দিয়েছিলাম কমিশনের মাধ্যমে। আমাদের যে স্বপ্ন আছে এবং সেই স্বপ্নগুলোর রূপরেখা তুলে ধরেছেন। যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পুনরুত্থান হলো, সেই স্বপ্নকে আমরা ধারণ করতে পারছি কি-না, সেটাই আমাদের বিবেচ্য বিষয়। এটা এখানে শেষ না, এই অধ্যায় শুরু হলো। স্বপ্ন এবং অভ্যত্থান পরবর্তী যাত্রা শুরু হলো।

ড. ইউনূস আরও বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনারা আলোচনার রস তুলে দিলেন। এই আলোচনায় কীভাবে সবাই মতৈক্য হবে, এখান থেকে তৈরি হবে নতুন বাংলাদেশের চার্টার। সেই চার্টার মতৈক্যের ভিত্তিতে হবে। নির্বাচন হবে, সবকিছু হবে কিন্তু ইতিহাসের অংশ হিসেবে চাটার্র আমাদের জাতীয় কমিটমেন্ট।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি, সব দল এই চার্টারে সাইন করবে। এটা হবে আমাদের জাতীয় সনদ। যে সনদ বুকে নিয়ে আমরা অগ্রসর হব। যত তাড়াতাড়ি পারি, যত বেশি পরিমাণ পারি, এটা বাস্তবায়ন করতে থাকব। ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, এই চার্টারের ভিত্তিতে সেটাও যেন ঐকমত্যের সরকার হয়। এই চার্টারকে আমরা ধরে রাখব। আমরা এর কন্টিনিউটি চাই কাজে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে কমিশনের প্রধান গণ প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন তুলে দেন।

এদিকে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া নিয়ে গতকাল বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পরিবেশ ও বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও এলজিআরডি উপদেষ্টা আসিফ ইসলাম সজিব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত চারটি কমিশনের প্রতিবেদন আমাদের হাতে এসেছে। আরও ৬টি কমিশনের কাজের মেয়াদ এক মাস বাড়ানো হবে। কমিশনপ্রধানরা এক মাস চেয়ে নিয়েছেন। তারা প্রধান প্রধান বিষয়গুলো গুরুত্ব দেবেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, মোট ১১টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে আজ পর্যন্ত চারটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে হস্তান্তর করা সুপারিশগুলোর মধ্যে কিছু কিছু কনটেন্ট পুনরাবৃত্তিসহ কিছু সংশোধনী থাকায় কমিশন প্রধানরা আগামী ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চেয়ে নিয়েছেন। কমিশন এ সময়ের আগেই চূড়ান্ত সুপারিশমালা প্রণয়ন করতে পারলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা প্রথম সপ্তাহেও শুরু হতে পারে।

তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিয়েছে। লিখিত মতামত দিয়েছে। কমিশন যতটুকু মনে করেছেন তা নিয়েছেন। তাদের রিপোর্ট এবং সামারি দিয়েছে। যে রিপোর্টগুলো আমাদের কাছে এসেছে সেই কমিশনের প্রধানেরা স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। এখন কমিশনপ্রধানরা সেই রিপোর্টগুলো নিয়ে বসবে। বসে এখান থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে, কোথায় কোথাও তাদের প্রাধান্য দেয়া উচিত, তারা ঠিক করবে। আগামীকাল আজ বৃহস্পতিবার ছয়টি কমিশনের কাজের সময় আরও একমাস বাড়িয়ে দেয়া হবে।

এ সময় আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের কর্ম পরিকল্পনার চারটা ধাপ ছিল। একটা হচ্ছে কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট প্রণয়ন করবে, সুপারিশ দেবে। দ্বিতীয় হচ্ছে, কমিশনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা প্রয়োজনীয় আইন এবং নীতি প্রণয়ের কাজ শুরু করব। আমাদের প্রত্যাশা আছে আমরা পুরো কাজটা সম্পূর্ণ করে যেতে পারবো। নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলো কতটুকু সংস্কার করতে পারে।

গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের আশা আছে, বিশ্বাস আছে যেই গতিতে এগুচ্ছি ইনশাআল্লাহ সামনের নির্বাচনের আগে অন্তত ট্রায়াল কোর্টে বিচার কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। এখানে কারো কোনো প্রকার গাফিলতি নাই, আপনাদের কাছে আমাদের প্রতিজ্ঞা অবশ্যই বাংলাদেশে যে নির্মম অমানবিক গণহত্যা হয়েছে সরকার তার বিচার করবে।

আসিফ নজরুল বলেন, আমি নিশ্চিতভাবে বলতে চাই, বিচারের কার্যক্রম অত্যন্ত সাবলীলভাবে চলছে। আমরা বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছিÍ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওপর। এখানে রাষ্ট্রপক্ষের অংশগ্রহণ বেশি। ফলে আমরা এটাকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। যেই গতিতে মামলার তদন্ত কাজ চলছে, আশা করছি আগামী মার্চ থেকে শুনানি শুরু হতে পারে।

বিফ্রিংয়ে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।