টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট অঞ্চল। শুক্রবার (১৭ জুন) সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টিপাত কয়েক ঘণ্টার জন্য থামলেও রাত ২টা থেকে আবারও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। প্রতিকূল এই পরিস্থিতির মধ্যে আরও দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে আবহাওয়া পূর্বাভাসের বিভিন্ন মডেল।
শনিবার (১৮ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ সারসা বার্তা অনলাইনকে জানান, আজ সকাল ৬টা থেকে রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় রেকর্ড পরিমাণে ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। এমনই সম্ভাবনা নির্দেশ করছে বিশ্বের প্রধান-প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল।
সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলোর মধ্যে প্রধান দুটি হলো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের European Centre for Medium-Range Weather Forecasts ও যুক্তরাষ্ট্রের Global Forecast System (GFS) মডেল।
তিনি জানান, সাধারণত দুটি মডেলের পূর্বাভাসে কিছু পার্থক্য থাকে। তবে প্রায় অবিশ্বাস্যভাবে এই দুটি মডেলই একই স্থানে একই পরিমাণের (২৫০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার) বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে। এধরনের পূর্বাভাস শতভাগ সঠিক বলে ধরে নেওয়া যায়। বড় দুঃসংবাদ হলো, মূল বৃষ্টিপাত হবে সিলেটে জেলার জৈন্তাপুর উপজেলা ও সেখানকার ভারতীয় সীমান্তে। ফলে এই বৃষ্টিপাতের কারণে প্রচণ্ড পাহাড়ি ঢল জাফলং দিয়ে বাংলাদেশের প্রবেশ করার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।
মোস্তফা কামাল পলাশ আরও বলেন, যেহেতু পাহাড়ি ঢল জাফলং দিয়ে প্রবেশ করবে, তাই এই বৃষ্টি সিলেটের জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, ও বিয়ানীবাজার উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটানোর প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সিলেট শহরের বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটবে।
তিনি আরও জানান, শনিবার (১৮ জুন) ভোর ৪টা থেকেই সুনামগঞ্জের ছাতক ও হবিগঞ্জের বানিয়া-চং উপজেলায় বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে তা সিলেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় বৃষ্টি শুরু হবে, যাবে যা পরবর্তী ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
শুক্রবার (১৭ জুন) ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের (আইএমডি) বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতপ্রবণ এলাকা ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা জুন মাসে ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
আর তিন দিনে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটিও গত ২৭ বছরের মধ্যে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস বলছে, চেরাপুঞ্জিতে শনিবার আরও ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের উজানে আসামে গুয়াহাটিতে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। ওই দুই এলাকার ভাটি এলাকা হিসেবে বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রামে ওই পানি নামা শুরু করবে।এর আগে থেকেই ওই এলাকায় এমনিতেও বৃষ্টি বেশি ছিল। এর সঙ্গে নতুন পানি যোগ হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আপনার মতামত লিখুন :