

শেখ নাজমুল ইসলাম : দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকা যশোর ৮৫/১(শার্শা) সংসদীয় আসনটির ভেতর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থল বন্দর অবস্থিত হওয়ায় অনেক গুরুত্ব বহন করে। শার্শা উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও বেনাপোল পৌরসভা নিয়ে গঠিত আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,০৭,৯৯৩ জন । তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১,৫৩,৬৭৯ জন, মহিলা ১,৫৪,৩৫১জন এবং হিজড়া ৩ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১০২ টি ও ভাট কক্ষ ৫৭৭ টি।
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী ৪ জনের নাম আলোচনায় এসেছে। তারা হলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক এমপি মফিকুল হাসান তৃপ্তি, শার্শা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও ২ বার সদর ইউনিয়ন থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবুল হাসান জহির, উপজেলা বিএনপি’র প্রধান উপদেষ্টা আলহাজ্ব খাইরুজ্জামান মধু এবং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নুরুজ্জামান লিটন। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নির্ধারিত হয়ে আছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাশী মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, “আমি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ১৯ দফায় অভিভূত হয়ে ১৯৭৯ সালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে যোগদান করি। তারপর থেকে আমি ছাত্রদলের হল কমিটির সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির যুগ্ন আহবায়ক, সেন্ট্রাল কমিটির মেম্বার ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হই। আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তারপর আমি কেন্দ্রীয় বিএনপি’র দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। অল্প সময়ের জন্য এমপি হলেও আমি তখন শার্শার অনেক উন্নয়ন করেছি। বিগত ১৬ বছর স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে যে সকল বিএনপি’র নেতাকর্মী হামলা মামলার শিকার হয়েছেন আমি তাদের পাশে থেকেছি। তাই আমি আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে আমি বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় এবং জনগণের ভোটে এমপি হতে পারলে অবহেলিত এই শার্শার কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য তথ্যপ্রযুক্তি সহ সকল সেক্টরকে আধুনিকায়ন করতে চাই। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব দূর করতে চাই। বেনাপোল স্থল বন্দরকে যুগ উপযোগী গতিশীল করে রাজস্ব খাতকে আরো শক্তিশালী করতে চাই। সর্বোপরি শার্শা বেনাপোল কে মাদকমুক্ত ও পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ”
তিনি আরো বলেন, “আমি জোর গলায় বলতে পারি নীতি নৈতিকতা ও সততা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে পারে নাই। আর ভবিষ্যতেও পারবেনা ইনশাআল্লাহ। সততাই আমার মূল শক্তি এবং সাহস। ”
বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী শার্শা উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আবুল হাসান জহির ভোরের দর্পণ কে বলেন, “আমি ১৯৮০ সালে বিএনপি’র ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে ছাত্রদলের সভাপতি সহ অসংখ্য পদে দায়িত্ব পালন করে বর্তমানে শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। ১৯৯২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বিএনপি’র পক্ষ থেকে শার্শা সদর ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলাম। ২০১৮ সালে আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। আমি আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমি মনে করি বিএনপি’র দুঃসময়ে সকল হামলা মামলা সহ্য করে শার্শা উপজেলা বিএনপিকে আগলে রেখেছি আমি। বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ আমার নামের ৪৬ টি মামলা দিয়েছে। তারপরও আমি দলকে ছেড়ে যায়নি। শার্শার যত নেতা কর্মীদের নামে আওয়ামী লীগ মামলা দিয়েছে তাদের আমি জামিন করিয়েছি, আহতদের চিকিৎসা করিয়েছি। বিএনপি’র কেউ মারা গেলে শতবাধা উপেক্ষা করে তার জানাযায় শরিক হয়েছি। আওয়ামী লীগের ১৭ বছরের দুঃশাসনের সমযয়ে আমি নেতৃত্ব দিয়ে শার্শায়ে মশাল মিছিল বের করেছি। আওয়ামী লীগ আমার সকল ব্যবসা বাণিজ্য দখল করে নিয়েছিল। ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলো। আমি মনে করি শার্শার নেতাকর্মীরা আমার উপর আস্থা রেখেছে। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে পারি তাহলে শার্শার স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসার, উন্নয়ন করতে চাই। কর্মমুখী শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব দূর করতে চাই। শার্শা ও বেনাপোল থেকে মাদক নির্মূল করে শার্শাকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়তে চাই।
বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী খায়রুজ্জামান মধু বলেন, “আমি ছাত্র জীবন থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে আমি উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে উপজেলা বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার জীবনের রাজনীতির শুরু থেকে বিএনপির সাথে আছি। দলের দুঃসময় ও দল থেকে সরে যায়নি। ওয়ান ইলেভেনের সময় বিএনপি রাজনীতি করার কারণে সেনাবাহিনী আমাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের নির্যাতন সহ্য করে উপজেলা বিএনপিকে আগলে রেখেছি। তাই আগামী সংসদ নির্বাচনে আমি বিএনপি’র পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনোনয়ন পেয়ে এম পি হতে পারলে আমার প্রথম কাজ হবে শার্শাকে মাদক মুক্ত করা। দ্বিতীয়তঃ কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা। এবং সার, বীজ ও কীটনাশক সহজলভ্য করা। ” তিনি আরো বলেন, “আমার পিতা ছিলেন শার্শা উপজেলার প্রথম গ্রাজুয়েট, শিক্ষানুরাগী পরিবার আমার, তাই শিক্ষা খাতকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে চাই। শার্শা থেকে যে কয়জন মনোনয়ন প্রত্যাশী আমি মনে করি আমি তাদের থেকে অনেক এগিয়ে। তাই আমি আশাবাদী। ”
মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ্ব নুরুজ্জামান লিটন বলেন, ” আমি শার্শা উপজেলার ছাত্রদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুবদলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। আরো অনেক পদ ছিল আমার। বর্তমানে উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। বিগত ১৬ বছর স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আমার দলের যে সকল নেতাকর্মীদের মামলা দিয়েছিল নিজের অর্থে তাদের মামলার হাইকোর্টের সকল খরচ আমি চালিয়েছি। করোনাকালীন সময়ে আমি ১০হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে করোনাকালীন সময়ে খুলনা বিভাগের প্রতিটি থানায় আমি যুবদলের কমিটি করে দিয়েছি। শার্শা উপজেলার প্রত্যেকটি নেতাকর্মীর সাথে আমার অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। নেতাকর্মীদের বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছি। বিএনপি’র দুঃসময়ে দল ছেড়ে যাইনি। তাই আগামী নির্বাচনে যশোর ৮৫/১(শার্শা) থেকে আমি বিএনপির পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, এমপি নির্বাচিত হয়ে সর্বপ্রথম বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের ঘোষিত ৩১ দফার মধ্য থেকে বেকারত্ব দূর করার লক্ষ্যে কাজ করতে চাই। শার্শায় একটি উন্নত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। বেনাপোল স্থল বন্দরকে আধুনিক ও উন্নত বন্দরে পরিণত করতে চাই। শার্শা বেনাপোল কে শতভাগ মাদকমুক্ত করে আধুনিক নগরে পরিণত করতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ যদি বিএনপিকে ভোট দিয়া সরকার গঠন করার সুযোগ দেয় এবং আমার নেতা তারেক রহমান যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয় তাহলে আমাদের স্বপ্নগুলো সফল করা সম্ভব হবে। ”
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর ৮৫/১ শার্শা আসনটিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান ভোরের দর্পণ কে বলেন, “রাগ করার আমার ” আমি একজন সাবেক শিক্ষক। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের পক্ষ থেকে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিল। সেই নির্বাচনে দল মত নির্বিশেষে জনগণ আমাকে যে সমর্থন দিয়েছিল তাতে আমি মুগ্ধ। এবারের নির্বাচনে জামায়েত আমাকে এই আসন থেকে মনোনয়ন দিতে চায়। আমি শার্শার মানুষের কাছে দল, মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পরিচিত একজন মানুষ। এলাকার মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে এবং দিচ্ছে তাতে আমি আশাবাদী ইনশাআল্লাহ। ”
তিনি আরো বলেন, ” আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় যদি আমি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে আমার প্রথম কাজ হবে শার্শার সাড়ে ৪ লক্ষ মানুষের মধ্যে থেকে হিংসা, হানাহানি ও অনৈক্য দুর করা। দ্বিতীয়তঃ প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও বেনাপোল বন্দরকে দুর্নিত মুক্ত করার জন্য দক্ষ প্রশাসন গড়ে তোলা। এলাকার মানুষ যেন সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা পায় এই লক্ষ্যে কাজ করতে চাই। সীমান্তে সুইচ গেট নির্মাণ করে জলাবদ্ধতা দূর করতে চাই। তরুণদের মাদক থেকে ফিরিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে চাই এনে। নারীর মর্যাদা তা নিশ্চিত করতে চাই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা,কৃষি খাতকে আরো উন্নত যুগ উপযোগী করে গড়ে তুলতে চাই। ” নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে শার্শার রাজনীতি ততই সরব হচ্ছে। কে পাচ্ছেন বিএনপি টিকিট আর জামাতের প্রার্থী শক্ত পপ্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবেন তা সময় বলে দিবে।
আপনার মতামত লিখুন :