হাসিনাকে ফেরাতে নীলনকশা হচ্ছে দিল্লিতে!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৬, ২০২৪, ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ /
হাসিনাকে ফেরাতে নীলনকশা হচ্ছে দিল্লিতে!

এস এম মিন্টু

– সোমবার প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় বাংলাদেশী হিন্দু শিক্ষার্থীদের জমায়েত
– বেড়েছে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারেরকার্যক্রম চলমান রয়েছে। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিহ্নিত সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ দেড় শ’র বেশি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন সাবেক ১০ মন্ত্রীসহ ২৫ জন।

এরই মধ্যে দেশকে অস্থিতিশীল করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিশেষ করে চলতি মাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবসকে সামনে রেখে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছে একটি চক্র। ওই চক্রটি প্রতিবেশী দেশে বসে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে নতুন পরিকল্পনা করছে। তারা ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে আগামী ২০ জানুয়ারির পর ভয়ঙ্কর নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে পুরোদমে মাঠে নেমে অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করবে। সম্প্রতি দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন তথ্য দেন।

ওই কর্মকর্তারা বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুষ্কৃতকারীদের মাধ্যমে কিলিং মিশনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে এরই মধ্যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাগরিকরা অনুপ্রবেশ করে শিক্ষার্থী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্ঘবদ্ধ করছে। তাদের এই পরিকল্পনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী (বাংলাদেশ থেকে এখনো যারা পালাতে পারেনি বা আত্মগোপনে রয়েছে), তাদের সাথে যোগাযোগ করে ২০ জানুয়ারির পর ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী, যারা প্রতিবেশী দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে লেখাপড়া করছেন এবং বাংলাদেশে যারা রয়েছেন তাদের সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিপিএন ব্যবহার করে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে।

সম্প্রতি তদন্তে আরো বেশ কিছু ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। তার মধ্যে রয়েছে ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও কিছু স্থানে বাংলাদেশী হিন্দু শিক্ষার্থীদের জমায়েত। সেখানে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. প্রেরণা মালহোতরা রয়েছেন যিনি বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বিষয়ে জুলাই-আগস্ট থেকে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। গত ৩০ নভেম্বর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে একটি সমন্বয়মূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এ প্রকল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে কাজ করছে ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন আরএসএস ও সেন্টার ফর ডেমোক্র্যাসি, বহুত্ববাদ এবং মানবাধিকার নামের একটি এনজিও। মূলত ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অর্থায়নেই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। এখানে বাংলাদেশ থেকে পড়তে যাওয়া হিন্দু শিক্ষার্থীদের জমায়েত করা হচ্ছে। কয়েকটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, কোনো মুসলিম শিক্ষার্থীকে একাজে বা এই দলে সম্পৃক্ত করা হয়নি। জানা গেছে, ড. প্রেরণা মালহোতরার টিমে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন হিন্দু সাংবাদিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তারা নিয়মিত যোগাযোগ করছেন বলেও জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।

গোয়েন্দা সূত্র আরো জানিয়েছে, দিল্লিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বড় অংশ পড়াশুনা করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও তার অধীনস্থ বিভিন্ন কলেজে। বিশ্বস্ততার জন্য তারা বেছে নিয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইভাবে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে। প্রথমত, ভারতের মিনিস্ট্রি অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পূর্ণ ব্যবস্থাপনায় ইন্ডিয়ান কাউন্সিলর ফর কালচারাল রিলেশন্সের (আইসিসিআর) বৃত্তি নিয়ে। দ্বিতীয়ত, নিজ খরচে আইসিসিআর বৃত্তিপ্রাপ্ত।

এসব শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে এ সব শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই হিন্দু। অর্থাৎ সিলেকশন প্রক্রিয়াতেই এ ধরনের পক্ষপাত করা হয়। সার্বিক বিবেচনায় দিল্লিতে এ ধরনের প্রোগ্রাম আয়োজন করা খুব সহজ কাজ হয়।

৯ ডিসেম্বর প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় হিন্দু সমাবেশ : বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যে জানা গেছে, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিকে টার্গেট রেখে নাশকতার পরিকল্পনা ও ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির নীলনকশায় প্রাথমিকভাবে জমায়েতের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশী হিন্দু শিক্ষার্থীরা। ৯ ডিসেম্বর সোমবার বিকেলে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় বাংলাদেশী হিন্দু শিক্ষার্থীরা একটি বড় জমায়েত করার পরিকল্পনা করছে। প্রাথমিকভাবে পাওয়া খবরে জানা গেছে, দিল্লির ওই বড় জমায়েতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যাওয়া হিন্দু শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করবে। এমনকি ওই জমায়েতে ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন আরএসএসের সদস্যরাও থাকবে।

এদিকে শেখ হাসিনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসাথে শেখ হাসিনা আগে যত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তা সব মাধ্যম থেকে সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন আদালত। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগোযোগমাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে নানা কটূক্তি করেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা, যা বিভিন্ন ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া নেতাকর্মীদের সাথে ফোনে কথা বলে সেই বক্তব্য আবার নিজেই ছড়িয়ে দিতে বলছেন। সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে নারায়ণগঞ্জে গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমার মনে হয়, তার (মমতা) দেশেই শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রয়োজন। তার দেশে সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হচ্ছে। এ জন্যই মনে হয়, তিনি তার দেশের জন্য শান্তিরক্ষী বাহিনী চাচ্ছেন। ভারতের কিছু মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে, এটার জবাব এদেশের গণমাধ্যমে আপনারা দিতে পারেন সত্য ঘটনা প্রকাশ করে।’

এদিকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে নাশকতার যে নীলনকশা তৈরি করা হচ্ছে তার প্রতিরোধে কার্যক্রমও শুরু করেছে বাংলাদেশী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে কোনো জমায়েত না করার জন্য দিল্লিকে অনুরোধ জানানো হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী কাজের সাথে বাংলাদেশী হিন্দু শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখার জন্য অনুরোধ করা হবে। বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে বাংলাদেশী হিন্দু শিক্ষার্থীদের দেশবিরোধী কার্যক্রমে তার ক্যাম্পাসকে ব্যবহৃত হতে না দিতে অনুরোধ করবে। এছাড়াও হাইকমিশনের সহায়তায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভারতে পড়তে যাওয়া সব শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও তাদের কার্যক্রমের রিপোর্ট চাইবে।