ঢাকার পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দুই বছর আগে থেকেই এর পরিকল্পনা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম ঘটনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২০০৭ সালেই বিপথগামী বিডিআর সদস্যরা ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আগে বেশ কয়েকবার তাপসের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়।
সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক বিডিআর সদস্য তোরাব আলীর বাড়িতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তাপস বিডিআর ডিজি (মহাপরিচালক) ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা অনুুমোদন করেন। এই বৈঠকটি ছিল পিলখানার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীর বাসায়, এবং তাতে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বিডিআর সদস্যদের গভীর সম্পর্কের প্রমাণ মিলেছিল।
ওই সময়, মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ এবং তার স্ত্রীর হত্যার পরিকল্পনায় শুধু তাপসই নয়, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, মির্জা আজমসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। অভিযোগ ছিল—এই নেতাদের সম্মতি নিয়েই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছিল।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে, ১০-১২ জন বিডিআর সদস্য শেখ সেলিমের বাসায় সাক্ষাৎ করেন। তাদের বলা হয়েছিল, সরকারের সমর্থন রয়েছে। সেসময় পিলখানায় “জয় বাংলা” স্লোগান শোনা গিয়েছিল, যা পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের জন্য এক ধরনের সংকেত ছিল।
তবে কমিটির সভাপতি এ দুজনকে দায়সারা গোছের কিছু প্রশ্ন করে ‘হ্যাঁ, না’ ধরনের সংক্ষিপ্ত জবাব পান। এটি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। আমাদেরকে প্রশ্ন করতে দেওয়া হয়নি। কারণ, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পার সঙ্গে ব্যারিস্টার তাপস ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, মির্জা আজম এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি দুজন মহিলা সংসদ সদস্যসহ যেসব আওয়ামী লীগ নেতা পিলখানায় ঢুকেছিলেন, তারা সবাই জড়িত ছিলেন বলে আমরা মনে করি।
এদিকে, তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঘটনার পর, সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি এবং সেনাবাহিনীও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়ে কিছু তথ্য পেয়েছিল, তবে তাদেরকে কোনোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। সেসব নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি, পিলখানায় বিডিআরের সদর দপ্তরে এক ভয়াবহ বিদ্রোহের মুখে, সেখানে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালকসহ ৫৮ সেনা সদস্যকে হত্যা করা হয়। তাদের লাশ গুম করা হয় এবং মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের স্ত্রীকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পর, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব আনিস-উজ-জামানকে সভাপতি করে একটি ১০ সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করে।
তবে, সেই তদন্তের সময়ে, একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং কামরুল ইসলাম যথাযথভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হননি। তাছাড়া, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদও হয়নি। সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, বিডিআরের সদস্যরা তখন পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল রাজনৈতিক সমর্থন এবং সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার একটি গভীর ষড়যন্ত্র।
তদন্ত কমিটির সদস্য হাসান নাসির বলেন, ‘তদন্তে হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনার সঙ্গে ব্যারিস্টার তাপসসহ আরো কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। তদন্ত কমিটির কাছে এসেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কামরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, তবে কমিটির সভাপতি এ দুজনকে দায়সারা গোছের কিছু প্রশ্ন করে ‘হ্যাঁ, না’ ধরনের সংক্ষিপ্ত জবাব পান। এটি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা। আমাদেরকে প্রশ্ন করতে দেওয়া হয়নি। কারণ, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পার সঙ্গে ব্যারিস্টার তাপস ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, মির্জা আজম এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি দুজন মহিলা সংসদ সদস্যসহ যেসব আওয়ামী লীগ নেতা পিলখানায় ঢুকেছিলেন, তারা সবাই জড়িত ছিলেন বলে আমরা মনে করি।’
ওই ঘটনা তদন্তে লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে যে সেনাবাহিনীর কমিটি করা হয়, সেই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন লে. কর্নেল (পরে ব্রিগেডিয়ার জেনালের পদে অবসরপ্রাপ্ত) এ কে এম শামসুল ইসলাম শামস। তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া বিডিআর সদস্যরা আমাদের তদন্ত কমিটির কাছে যে স্বীকারোক্তি দেন, তাতে স্পষ্ট হয় যে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা জড়িত ছিলেন।
বিডিআরের দাবি, ক্ষোভ থেকে ওই নৃশংস ঘটনা ঘটেনি। এটি ছিল সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করতে, দেশকে অকার্যকর করতে বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফল। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে কাজে লাগানো হয়েছে।’
হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সদস্যদের স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে আরও কিছু চমকপ্রদ তথ্য। সিপাহি আশরাফুল আলম তার জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকেই বিডিআর সদস্যরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা একাধিক বৈঠক করে এবং দাবিগুলো পূরণের আশ্বাস পায় ব্যারিস্টার তাপস থেকে। ২২ ফেব্রুয়ারি, তাপসের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকে তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়, যেখানে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা উপস্থিত ছিলেন।
১৬-১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে গলফ মাঠে আরেকটি বৈঠক হয়, যেখানে পূর্বের বৈঠকের সব আলোচনা কঠিনভাবে বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে লিফলেট ছাপানো হয় এবং সেগুলো বিভিন্ন গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে হাজারীবাগ ট্যানারির মোড়ে আরেকটি বৈঠক হয়। বৈঠকে হাবিলদার সামাদ, নায়েক সাত্তারসহ (২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন) আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
ওই বৈঠকে ডিজি এবং ডিজি ম্যাডামকে মেরে ফেলার কথা জানানো হয়। হত্যার জন্য দুই কসাইয়ের (কসাই হারুন ও কসাই মজিবুর) সঙ্গে ব্যবস্থা করা হয় এবং ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়।
সিপাহি আশরাফুল আলমের জবানবন্দিঃ তদন্ত কমিটির কাছে যেসব বিডিআর সদস্য স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সিপাহি মো. আশরাফুল আলম ব্রান্ড (নম্বর ৫৯১১৫)। তিনি বগুড়ার ধুনটের বেলকুচি গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মনুরুদ্দিন আকন্দ।
আশরাফুল তার জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর থেকে বিডিআর সদস্যদের দাবিদাওয়া পূরণের জন্য নানা সময় বিভিন্ন পরিকল্পনা চলছিল। তাদের দাবি পূরণের লক্ষ্যে তারা প্রায়ই অফিসারদের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবতেন। এ সময় তারা হাজারীবাগের ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাপস তাদের আশ্বাস দেন যে, তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করলে তিনি বিডিআরের দাবিদাওয়া পূরণ করবেন।
২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি আশরাফুল জানতে পারেন, বিডিআর সদস্যরা অফিসারদের জিম্মি করবেন এবং তাদের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। এরপর, সদর ব্যাটালিয়নের ব্যান্ড প্লাটুনের হাবিলদার সামাদ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান। ওই দিন আনুমানিক রাত ৮টার দিকে ডিএডি হারুনের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে আশরাফুল, ডিএডি হারুন, ডিএডি তৌহিদ, সুবেদার আসাদ (৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন), নায়েক সুবেদার সুলতান (৩৬ রাইফেল ব্যাটালিয়ন) এবং আরও প্রায় ২৭ জন বিডিআর সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ডিএডি হারুন বলেন, যতদিন দরবার না হবে, ততদিন অফিসারদের জিম্মি করে তাদের দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। তিনি জানান, দাবিদাওয়া পূরণ হলে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে অফিসারদের ছেড়ে দেওয়া হবে। এরপর, আরও কয়েকটি বৈঠকে এ পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
১৬-১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে গলফ মাঠে আরেকটি বৈঠক হয়, যেখানে পূর্বের বৈঠকের সব আলোচনা কঠিনভাবে বাস্তবায়নের জন্য বলা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ডিএডি তৌহিদের নেতৃত্বে লিফলেট ছাপানো হয় এবং সেগুলো বিভিন্ন গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে হাজারীবাগ ট্যানারির মোড়ে আরেকটি বৈঠক হয়।
বৈঠকে হাবিলদার সামাদ, নায়েক সাত্তারসহ (২৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন) আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে ডিজি এবং ডিজি ম্যাডামকে মেরে ফেলার কথা জানানো হয়। হত্যার জন্য দুই কসাইয়ের (কসাই হারুন ও কসাই মজিবুর) সঙ্গে ব্যবস্থা করা হয় এবং ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে তাপসের উপস্থিতিতে এক বৈঠক হয়, যেখানে তাদের দাবির বিষয়ে আলোচনা হয়। তাপস তাদের পরিকল্পনায় সহমত দেন এবং জানান, বেশি অফিসার না মেরে দু-একজনকে হত্যা করতে হবে। বৈঠকের পরে, ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি, সিপাহি আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে কয়েকটি গ্রুপে কাজ বণ্টন করা হয়। কিছু দলকে ব্যাটালিয়নের অস্ত্র সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়, আর কিছু দলকে ডিজির বাসার নিরাপত্তা ভেঙে ঢোকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
২৫ ফেব্রুয়ারি, সিপাহি আশরাফুল জানাচ্ছেন, ভোর ৬:৩০টার দিকে হাবিলদার সামাদ ব্রিফিং দিয়ে নির্দেশ দেন। সকাল ৯টার মধ্যে তিনি দরবার হলের পেছনে অবস্থান নেন। সিপাহি মইনুল এবং সিপাহি তারেক প্রথমে দরবার হলে ঢুকে ডিজির পাশে অবস্থান নেন। সিপাহি মইনুল ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সিপাহি তারেক অস্ত্র নিয়ে দরবার হলে ভিতরে প্রবেশ করেন। এরপর সিপাহি তারেক ও অন্যান্য সদস্যরা অফিসারদের গুলি করা শুরু করেন। সিপাহি আশরাফুল জানান, তিনি ডিজি, কর্নেল নাফিজ এবং কর্নেল মুজিবকে হত্যার কাজে অংশ নেন। এছাড়াও, সিপাহি শহীদ ক্যাপ্টেন তানভীরকে হত্যা করা হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের পরে, দেহগুলোর ব্যবস্থা করা হয়। হাসপাতালের কাছে দুটি গণকবর খোঁড়া হয় এবং লাশগুলো সেখানে দাফন করা হয়। কিছু লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেওয়া হয়। পরে, ডিজির বাসায় লুটপাট চালানো হয়। সিপাহি আলমগীরসহ কয়েকজন সদস্য ডিজি ম্যাডাম এবং তার বাসায় থাকা অন্যদের হত্যা করেন।
রাতে, অফিসারদের পরিবারের সদস্যদের কোয়ার্টারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়। এতে সিপাহি তারেক, সিপাহি আতিক, সিপাহি সামাদসহ আরও কয়েকজন জড়িত ছিলেন।
আশরাফুল আলমের ভাষ্য অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের পর লাশ গুম করা, লুটতরাজ করা এবং নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এসময়, “জয় বাংলা” স্লোগান শোনা গিয়েছিল এবং বিডিআরের সদস্যদের মধ্যে একটি দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে সরকার তাদের পক্ষে রয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদনেও এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে। তবে, তদন্ত কমিটি কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করতে পারেনি এবং এর জন্য তাদের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরা হয়েছে।
একদিকে, গোপন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে তদন্তের পক্ষে কিছু অনুসন্ধান শুরুর কথা বলা হয়েছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রতি অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অথচ বিডিআরের বেশ কিছু সদস্য নির্বাচনের আগে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের অফিসে যান। এরপর নির্বাচনের তিন-চার দিন পর কয়েকজন বিডিআর সদস্য তাপসের বাসভবন ‘স্কাই স্টার’-এ যান। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে শেখ সেলিমের বাসায় দুজন ডিএডি এবং বেসামরিক জাকিরের নেতৃত্বে ১০-১২ জন বিডিআর সদস্য সাক্ষাৎ করেন।
ঘটনার দিন, দুপুর সাড়ে ১২টায়, বিডিআরের পক্ষ থেকে তিন নম্বর গেটের সামনে শতাধিক মানুষের মিছিল বের হয়। এই মিছিলে ‘জয় বাংলা, জয় বিডিআর’, ‘বিডিআর-জনতা ভাই ভাই’ স্লোগান শোনা যায়। একই সময়ে, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম ১৪ সদস্যের বিডিআর প্রতিনিধিকে প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যমুনার দিকে নিয়ে যান। তবে, ওই ১৪ জনের নামের তালিকা তদন্ত কমিশনে পাওয়া যায়নি।
সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিদ্রোহীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এই সময়, রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা বেশি গুরুত্ব পায় এবং বিডিআর সদস্যদের দাবির মুখে সেনাবাহিনী ও র্যাবকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বলা হয়। রাজনৈতিক সমাধান ফলপ্রসূ না হওয়ায়, বিদ্রোহীরা হত্যাকাণ্ড, লাশ গুম করা, নির্যাতন ও লুটপাট শেষে পালানোর জন্য দীর্ঘ সময় পায়।
প্রতিবেদনে ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়কসহ সদস্যদের ভূমিকা সন্দেহজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বিষয়টি আরও তদন্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, গোয়েন্দাদের গোপন সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টুর সমর্থকরা বিডিআর সদস্যদের ট্রলারযোগে পালাতে সহায়তা করেছিলেন কি না, তাও তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে। এছাড়া, সেনাবাহিনী সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য গণমাধ্যমের সমালোচনা করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “যে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা বিশ্লেষণ করেও বিদ্রোহের মূল পরিকল্পনাকারী কারা ছিল তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।” এর জন্য তদন্তে সীমাবদ্ধতা জানানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :